সোমবার | ২৩শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৮ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রাজশাহী সিটিতে নাগরিক সেবা তলানিতে

নিজস্ব প্রতিবেদক: নওগাঁর বাসিন্দা সাইফুল ইসলাম (ছদ্মনাম) বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ চুকিয়ে রাজশাহী শহরে ভাড়া বাসায় থেকে চাকরির প্রস্তুতি নিচ্ছেন। সম্প্রতি নিজের পাসপোর্ট তৈরির জন্য অস্থায়ী নাগরিকত্ব সনদ পেতে নগরীর ১০ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর কার্যালয়ে যান। কিন্তু এ ধরনের সনদ আপাতত দেওয়া হচ্ছে না জানিয়ে তাকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়।

বিভিন্ন দালিলিক প্রমাণ দেওয়া হলেও সনদটি পেতে তাকে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। ভুক্তভোগী ওই যুবক বলেন, ‘১০ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর কার্যালয় থেকে ২০০-২৫০ মিটার দূরে একটি ভাড়া বাসায় থাকি। পূরণ করা ভাড়াটিয়া ফরম, বিদ্যুৎ বিলের কাগজসহ যাবতীয় প্রমাণ নিয়ে গেলেও অস্থায়ী নাগরিকত্ব সনদ আমাকে দেওয়া হয়নি। কর্তৃপক্ষ চাইলেই খুব সহজেই আমার তথ্য যাচাই করতে পারত। কিন্তু অনেক অনুরোধ সত্ত্বেও তারা আমাকে সনদটি দেয়নি।’

শুধু ওই ওয়ার্ডেই নয়, রাজশাহী সিটি করপোরেশনের (রাসিক) সবগুলো ওয়ার্ডেই সব ধরনের সেবা কার্যক্রম ঝিমিয়ে পড়েছে। বিশেষ করে কাউন্সিলরকেন্দ্রিক কার্যক্রমে ভাটা পড়ায় নাগরিক সেবার মান এখন তলানিতে। ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকারের পতনের পর ভেঙে পড়া এই সেবা কার্যক্রম এখনো স্বাভাবিক হয়নি।

জানা গেছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে দুই শিক্ষার্থীকে হত্যাসহ বিভিন্ন মামলায় সাবেক মেয়র খায়রুজ্জামান লিটনসহ রাসিকের ২০ কাউন্সিলরকে আসামি করা হয়েছে। ফলে গ্রেপ্তার এড়াতে তারা আত্মগোপনে চলে গেলে ভেঙে পড়ে নাগরিক সেবা। পরে গত ১৯ আগস্ট মেয়র পদ থেকে লিটনকে ও ২৬ সেপ্টেম্বর সব কাউন্সিলরকে অপসারণ করে সরকার। তখন থেকে বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের কর্মকর্তাদের কাউন্সিলরের দায়িত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু ওই কর্মকর্তারা প্রাতিষ্ঠানিক কাজ সামলে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালনে চাপ অনুভব করছেন। ফলে তারা সব কাজ সঠিক সময়ে করতে পারছেন না। এতে বিভিন্ন সেবা পেতে নাগরিকদের পদে পদে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।

সিটিজেন চার্টার অনুযায়ী, ওয়ার্ড কাউন্সিলর কার্যালয় থেকে জন্ম-মৃত্যুনিবন্ধন, নাগরিকত্ব (স্থায়ী-অস্থায়ী), চারিত্রিক, উত্তরাধিকারসহ (ওয়ারিশ) বিভিন্ন সনদ দেওয়া হয়।

এ ছাড়া ওয়ার্ড কাউন্সিলরের কার্যালয় থেকে বিভিন্ন প্রত্যয়নপত্র, অনাপত্তিপত্র, জাতীয় পরিচয়পত্র ও ভোটার তালিকার যাচাইকারী হিসেবে একজন কাউন্সিলরকে স্বাক্ষর দিতে হয়। নগরের এসব সেবা অব্যাহত রাখতে সরকারি দপ্তরের ১৮ কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

সেবা প্রার্থীদের অভিযোগ, দায়িত্ব পাওয়া প্রশাসনিক কর্মকর্তারা ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের চেনেন না। এ ছাড়া একেকজন কর্মকর্তার ওপর ৩-৪টি করে ওয়ার্ডের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আবার তারা সপ্তাহে দুই দিন ছুটিতে থাকেন। বাকি পাঁচ দিন অফিস করলেও বিকেল ৫টার পর তাদের পাওয়া যায় না। এ ছাড়া নিজ দপ্তরের কাজে তারা মাঝে মধ্যে জেলার বাইরে থাকেন। এতে কাউন্সিলর কার্যালয়ের মতো সেবা এখন পাওয়া যাচ্ছে না।

নিজের ওয়ার্ডের নাম না জানিয়ে আবু সুফিয়ান নামে এক ব্যক্তি বলেন, ‘ছেলের জন্মনিবন্ধন করতে ওয়ার্ড কার্যালয়ে গিয়েছিলাম। জন্মনিবন্ধন ফরমও জমা দিয়েছি। সেখান থেকে বলা হয়েছে কয়েকদিন সময় লাগবে। মূলত ওয়ার্ড কার্যালয়ে বেশ কিছু ফাইল জমা পড়ার পর সেগুলো কাউন্সিলরের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তার কাছে স্বাক্ষরের জন্য নিয়ে যাওয়া হয়। কারণ ওই কর্মকর্তা নিজ দপ্তরের কাজে ব্যস্ত থাকেন। তাই সব সময় সেখানে স্বাক্ষরের জন্য যাওয়া যায় না।’

রাসিকের ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের সচিব ওবায়েদুর রহমান বলেন, কাউন্সিলররা সপ্তাহে সাত দিন নাগরিকদের সেবা দিতে পারলেও একজন সরকারি কর্মকর্তার পক্ষে তা সম্ভব নয়। কারণ তাদের শুক্র ও শনিবার ছুটি থাকে। আবার কর্মকর্তাদের যেহেতু নিজ দপ্তরেও কাজ থাকে তাই তাদের পক্ষে কাউন্সিলরের কার্যালয়ে বসে সেবা দেওয়া সম্ভব না। তবে আমরা বিভিন্ন ফাইল তাদের কাছে নিয়ে গেলে তারা সেগুলোতে স্বাক্ষরসহ সার্বিক সহযোগিতা করছেন।

অস্থায়ী নাগরিকত্ব দেওয়া বন্ধ নেই জানিয়ে তিনি বলেন, কেউ যদি অস্থায়ী নাগরিক হন তার সম্পর্কে তো আমাদের জানা থাকার কথা না। ভাড়া বাসায় ফরম পূরণ করা থাকলে ও সব কিছু যাচাই করে সত্যতা পাওয়া গেলে সনদ দেওয়া হয়।

সার্বিক বিষয়ে জানতে রাসিকের ১ ও ৪ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলরের দায়িত্ব পাওয়া প্রাথমিক শিক্ষার রাজশাহী বিভাগীয় উপ-পরিচালক সানাউল্লাহ বলেন, ‘স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা যেহেতু এলাকার সবাইকে চিনতেন সেক্ষেত্রে তারা সহজেই যেকোনো সমস্যার সমাধান দিতে পারতেন। কিন্তু আমরা সবাইকে চিনবো না, এটাই স্বাভাবিক। তাই কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করে সঠিক হলে স্বাক্ষর দেই। এতে একটু সময়ক্ষেপণ হয়।’

Please Share This Post in Your Social Media



© 2023 priyorajshahi.com
Developed by- .:: SHUMANBD ::.