চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি: চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোলে বিজয় দিবসের পুরস্কার বিতরণী ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান চলাকালে দুই কিশোর ছুরিকাঘাতে নিহত হয়েছেন। অনুষ্ঠানে বাকবিতণ্ডা ও ধাক্কাধাক্কিকে কেন্দ্র করে আরও চারজন আহত হন। আওয়ামী লীগ দাবি করেছে তারা ছাত্রলীগের কর্মী। তবে পুলিশ বলছে, দুই কিশোর হত্যাকাণ্ড রাজনৈতিক কারণে নয়। দুইদল কিশোরদের সংঘর্ষে তারা মারা যান।
নিহতরা হলেন উপজেলার ফতেপুর ইউপির খোলসী গ্রামের মৃত এজাবুলের ছেলে মাসুদ (১৭) ও চাঁদপাড়া গ্রামের মৃত আব্দুর রহিমের ছেলে রায়হান (১১)। এর মধ্যে রায়হান পঞ্চম শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষা দিয়েছেন।
জানা গেছে, মল্লিকপুর গরুর হাটে স্থানীয় জিয়া পরিষদ আয়োজিত মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান চলছিল। এ সময় হঠাৎ করে দুই পক্ষ একে অপরের ওপর ছুরি নিয়ে হামলা চালায়। এতে ঘটনাস্থলেই মাসুদ ও রায়হান মারা যায়।
স্থানীয়দের ভাষ্য, নিহত মাসুদ রানা নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। গত রোববার রাতে তিনি উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় দেয়ালে জয় বাংলা স্লোগান লিখেছিলেন। এ কারণে তাদের উপরে হামলা করা হয়েছে।
তবে একটি সূত্র জানায়, ওই এলাকায় পেয়ারা বাগানে পলি বাঁধাকে কেন্দ্র করে কয়েক দিন ধরে খোলসি ও বাহির মল্লিকপুর গ্রামের যুবকদের মধ্যে বিরোধ চলে আসছিল। এরই জের ধরে এ সংঘর্ষ হয়।
পুলিশের ভাষ্য, মঙ্গলবার রাতে বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে কিশোর গ্যাংয়ের দুই পক্ষের মধ্যে তর্কাতর্কি হয়। এর জের ধরে অনুষ্ঠান শেষে দুই পক্ষ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এ সময় ছুরিকাঘাতে দুজন নিহত ও আরও চারজন আহত হয়।
নিহতদের ছাত্রলীগের নেতা দাবি করে রাতেই বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ফেসবুক ভেরিফাইড পেজে দাবি করা হয়, জয় বাংলা স্লোগান লেখার কারণে হত্যা করা হয়েছে তাদের। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকগুলো ফটো কার্ড ও ভিডিও ফুটেজ ছড়িয়ে পড়ে।
নাচোল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মনিরুল ইসলাম জানান, মঙ্গলবার (১৭ ডিসেম্বর) দিবাগত রাত পৌনে ১১টার দিকে উপজেলার মল্লিকপুর বাজারে বিজয় দিবসের পুরস্কার বিতরণী ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান চলাকালে দুই কিশোর দলের মধ্যে অনুষ্ঠানের ছবি ফেসবুকে পোস্ট দেওয়াকে কেন্দ্র করে বাকবিতণ্ডা ও ধাক্কাধাক্কির ঘটনা ঘটে।
এসময় অতিথিরা ও স্থানীয় লোকজন তাদের থামিয়ে অনুষ্ঠান থেকে বের করে দেয়। কিশোরদল অনুষ্ঠান থেকে বের হয়ে যাওয়ার পর পুনরায় সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়লে হতাহতের ঘটনা ঘটে।
গুরুতর আহত মাসুদ ও রায়হানকে তাদের স্বজনরা চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা হাসপাতালে নিয়ে গেলে হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. ফাহাদ আকিদ রেহমান জানান, আমাদের কাছে আসার আগেই মাসুদ ও রায়হানের মৃত্যু হয়েছে বলে জানান। বাকি আহতদের প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে। তাদের শরীরের বিভিন্নস্থানে ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।
নিহত রায়হানের বড় ভাই জাহাঙ্গীর আলম জানান, মল্লিকপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে এবার পঞ্চম শ্রেণিতে পরীক্ষা দিয়েছে রায়হান। বাড়ির পাশে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হওয়ায় দেখতে গিয়ে কোনো কারণ ছাড়াই খুন হতে হলো রায়হানকে। তিনি এমন নৃশংস হত্যায় জড়িতদের কঠোর বিচার দাবি করেন।
আহত আরমান আলী বলেন, আমি ট্রাকের একজন হেলপার। অনুষ্ঠান চলাকালে হঠাৎ করেই হামলার ঘটনা ঘটে। কারা কী কারণে হামলা চালাল, তা নিশ্চিত হতে পারিনি।
দুই কিশোর নিহতের ঘটনা রাজনৈতিক কারণে নয়, বরং একটি পক্ষ হত্যা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রোপাগাণ্ডা চালাচ্ছে বলে দাবি করেছে পুলিশ। বুধবার দুপুরে প্রেস বিফিংয়ে এমন দাবি করেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবুল কালাম সাহিদ।
প্রেস ব্রিফিংয়ে আবুল কালাম সাহিদ দাবি করেন, মল্লিকপুরের আব্দুস সালাম ও শাহীন আলীর মধ্যে পেয়ারা বাগান নিয়ে বিরোধ ছিল। এই বিরোধের জের ধরেই দুই পক্ষের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে মারা গেছেন মাসুদ ও রায়হান। এর আগে, মল্লিকপুর জিয়া সাংষ্কৃতিক পরিষদের বিজয় দিবসের একটি অনুষ্ঠান দুই পক্ষের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়।
আবুল কালাম সাহিদ বলেন, নিহতদের রাজনৈতিক কোনো পরিচয় পাওয়া যায়নি। পাশাপাশি জয় বাংলা লেখার জন্য তাদের হত্যা করা হয়েছে এমন তথ্যও পায়নি পুলিশ। এ নিয়ে যারা প্রোপাগাণ্ডা ছড়াচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জানান, হত্যার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে পুলিশ দুজনকে আটক করেছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। পাশাপাশি এলাকাতেও তদন্ত অব্যাহত রেখেছে পুলিশ।