নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশ সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুহাম্মদ আব্দুল্লাহ বলেছেন, সারাদেশের সাংবাদিকদের চিকিৎসার জন্য ঢাকায় একটি বিশেষায়িত হাসপাতাল তৈরি করা হবে। একই সাথে পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে যদি সাংবাদিকরা মামলা-মোকদ্দমার শিকার হন, তাদের আইনি সহায়তা দেওয়ার জন্য একটি ল’ইয়ার্স প্যানেল গঠন করা হবে। এছাড়া সরকারি অনুদানের জন্য যোগ্য প্রত্যেক সাংবাদিককে পর্যায়ক্রমে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে।
বৃহস্পতিবার (২৬ ডিসেম্বর) দুপুরে রাজশাহী সার্কিট হাউস মিলনায়তনে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
বাংলাদেশ সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম কিস্তির অনুদানের চেক বিতরণ উপলক্ষে ‘সাংবাদিকদের আর্থিক সুরক্ষা ও কল্যাণে করণীয়’ শীর্ষক মতবিনিময় সভা আয়োজন করা হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন রাজশাহীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) টুকটুক তালুকদার। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন রাজশাহী সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি মুহা: আব্দুল আউয়াল ও সাংবাদিক ইউনিয়ন বগুড়ার সভাপতি গণেশ দাস। অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় ছিলেন বিএফইউজের সহকারী মহাসচিব ও রাজশাহী সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক ড. সাদিকুল ইসলাম স্বপন।
বক্তব্য রাখেন রাজশাহী সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি বিশিষ্ট কথাশিল্পী ডা. নাজিব ওয়াদুদ, সাবেক সভাপতি বিশিষ্ট গবেষক সরদার আব্দুর রহমান, এটিএন বাংলার রাজশাহী প্রতিনিধি সুজাউদ্দিন ছোটন প্রমুখ। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মুহাম্মদ আব্দুল্লাহ বলেন, আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর দেশের ৩৫০ জন সাংবাদিকের জন্য সম্মানি বরাদ্দের ব্যবস্থা করেছিলাম, সেটি শেষ পর্যায়ে রয়েছে। বরিশাল ও সিলেট দিয়ে প্রথম কিস্তি শেষ হবে। বিভাগীয় শহর ও বৃহত্তর জেলাগুলোতে যাওয়ার চেষ্টা করছি।
তিনি সচিবালয়ে আগুন লাগার প্রসঙ্গে বলেন, সচিবালয়ে যে আগুন লেগেছে, তা স্বাভাবিক আগুন নয়। এটি একটি রহস্যময় ঘটনা। উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম জানিয়েছেন, লুটপাট চিহ্নিত করতে কাজ করছিলাম। তখন পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। পলকের (আইসিটি) জায়গায় আগুন দেখা গেছে। এখন বাংলাদেশে ষড়যন্ত্র চলছে। পতিত স্বৈরাচারি সরকারের প্রধান পালিয়ে গেলেও তার দোসররা জাল বিস্তার করে রেখেছে। আমি তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডের।
এম আব্দুল্লাহ সাংবাদিকদের স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে বলেন, আমরা ঢাকায় একটি বড় হাসপাতালে বিশেষ চুক্তির আওতায় সাশ্রয়ী মূল্যে চিকিৎসার ব্যবস্থা করার চেষ্টা করছি। এছাড়া কল্যাণ ট্রাস্টের নিজস্ব জায়গা নিয়ে কাজ করছি, যেখানে একটি হাসপাতাল, অফিস এবং ডরমিটরি থাকবে। ঢাকার বাইরের সাংবাদিকরা নামমাত্র খরচে এখানে থাকতে পারবেন।
আইনি সহায়তা বিষয়ে তিনি জানান, সাংবাদিকরা যখন কোনো মামলায় জড়ান, তাদের জন্য একটি ল’ইয়ার্স প্যানেল তৈরি করার চিন্তা করছি। এই প্যানেল তাদের আইনি সহায়তা প্রদান করবে।
মুহাম্মদ আব্দুল্লাহ গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ে বলেন, আমাদের উপদেষ্টা অত্যন্ত সাংবাদিকবান্ধব। তিনি সাংবাদিকদের কাজের ওপর কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ করেন না এবং সাংবাদিকরা এখন সর্বোচ্চ স্বাধীনতা ভোগ করছেন। গায়েবি জায়গা থেকে ফোন যায় না। আরো কিছু সুখবর আসতে যাচ্ছে।
এম আব্দুল্লাহ বলেন, অন্য পেশার তুলনায় সাংবাদিকদের আয়ুর জায়গাটায় সমস্যা হচ্ছে। সাংবাদিকদের মৃত্যু হার বেশি, শেষ বয়সে অসহায় হয়ে যান। সন্তান যাদের কাছে নেই, ওষুধপত্র খাওয়ার মতো সংগতি নেই। সাংবাদিকদের বিষয়ে উপদেষ্টা জানার পর সাই দিলেন। প্রবীণ সাংবাদিকদের আর্থিক অনুদানের নীতিমালা প্রণয়নে কাজ করছি। অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। আশা করছি, আমি মাস ছয়েক দায়িত্বে থাকলে প্রবীণ সাংবাদিকদের জন্য ভাতা চালু করে যাব।
কল্যাণ ট্রাস্টের এমডি বলেন, চিকিৎসার জন্য কী করা যায়, পথ খুজছি। বিশেষভাবে ঢাকায় বড় হাসপাতালে চুক্তির আওতায় সাশ্রয়ী রেটে চিকিৎসা করানোর চেষ্টা করছি।
এম আব্দুল্লাহ বলেন, আমাদের নিজস্ব জায়গা বরাদ্দ নেওয়া যায় কিনা সেই প্রাণান্তকর চেষ্টা করছি। যদি নিতে পারি, হাই রেস বিল্ডিং হবে। কল্যাণ ট্রাস্টের নিজস্ব অফিস হবে, হাসপাতাল হবে, ডরমিটরি থাকবে, ঢাকার বাইরের সাংবাদিকরা নামমাত্র খরচে যাতে থাকতে পারেন। এছাড়া ভবনের ভাড়া দিয়ে আর্থিক শক্তিশালী হবে। হাসপাতালে সাংবাদিকরা বিশেষ সুবিধায় চিকিৎসা পাবেন, সেটা চিন্তাভাবনায় রয়েছে।
এদিন রাজশাহী বিভাগের ৫ জেলার (রাজশাহী, বগুড়া, নাটোর, নওগাঁ ও পাবনা) ২৬ জন সাংবাদিকের মাঝে ১৭ লাখ ৫০ হাজার টাকার সম্মানির চেক প্রদান করা হয়। সাংবাদিকদের নাম চূড়ান্ত প্রসঙ্গে কল্যাণ ট্রাস্টের এমডি এম আব্দুল্লাহ বলেন, রাজনৈতিক বিবেচনায় আবেদন বিবেচনা করা হয়নি। যারা ডাক পেয়েছেন, কল্পনাও করেননি। আগেও জানেন না। আগের দিন (বুধবার) জানতে পেরেছেন। কোনো তদবিরও করতে হয়নি।
তিনি বলেন, মৃত্যু জনিত কেসটাও ফেলে রাখা হয়েছে, দেওয়া হয়নি। আমি যদি থাকি পাওয়ার যোগ্য সবাই অনুদান পাবেন। অনুষ্ঠানে রাজশাহীসহ বিভাগের বিভিন্ন জেলায় কর্মরত সাংবাদিকেরা উপস্থিত ছিলেন।