নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজশাহী নগরঘেঁষা পদ্মা নদী। বর্ষা আসলে নদীতে আসে পানি। এরপর নামতে থাকে। হেমন্তকালের শেষে পানি অনেকখানি নেমে যায়। আর হেমন্তের শেষ থেকে নগরঘেঁষা এই চরে শুরু হয় রবিশস্য আবাদের কর্মযজ্ঞ। তবে এবছর শস্যের আবাদ বেড়েছে। জেলা প্রশাসন থেকে ইজারা নিয়ে চরে রবিশস্য আবাদ করা হচ্ছে।
নদীর বুকে জেগে ওঠা চর পলিমাটি মিশ্রিত উর্বর আবাদি জমিতে পরিণত হয়েছে। সেখানে চাষ হচ্ছে পেঁয়াজ-রসুন, ধান, গম, ভুট্টা, মসুর, মটরশুঁটি, রসুন, বাঁধাকপি, ফুলকপি, লাউ, টমেটো ও শিমসহ নানা ধরনের শাকসবজি। এতে বেড়েছে কর্মসংস্থান।
কৃষি সংশ্লিষ্টরা জানাচ্ছেন, আবহাওয়া ও ঋতুর উপর নির্ভর করে দেশের কৃষি মৌসুমকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে। মৌসুমগুলো হচ্ছে: রবি মৌসুম, খরিপ-১ ও খরিপ-২ মৌসুম। ১৬ অক্টোবর হতে ১৫ মার্চ (কার্তিক মাস থেকে ফাল্গুন মাস) পর্যন্ত এ সময়কালকে রবি মৌসুম বলা হয়।
জানা গেছে, চর এলাকার ১১টি ব্লকে মোট জমি রয়েছে ১৪ হাজার ৪৪ হেক্টর। এরমধ্যে ৭ হাজার ৯৪৮ হেক্টর জমিতে ফসল আবাদ হয়ে থাকে। আর ১৫ হেক্টর জমি পতিত রয়েছে। চরাঞ্চলের ২ হাজার ৭৯ হেক্টর জমিতে বছরে এক ফসল হয়। আর ৪ হাজার ১৭০ হেক্টর জমিতে দুই ফসল এবং বাকি ১ হাজার ৮১৯ হেক্টর জমিতে আবাদ হচ্ছে তিনটি ফসল।
চাষিরা বলছেন, চরের পলিমাটির সুবিধা পাওয়া যাচ্ছে, সার কম লাগে। তবে পানির সমস্যা সমাধানে নদী থেকে তেলা হচ্ছে। তাদের জন্য সুবিধাজনক হবে। এতে অর্থনীতি আরও চাঙা হবে। এখানে যোগাযোগের ব্যবস্থাও বেশ ভালো। আবাদ তোলার সময় সবরকমের পরিবহন সুবিধা পাওয়া যাবে।
নগরীর দরগাপাড়া এলাকার কৃষক মইনুল ইসলাম বলেন, ‘নদীতে চর পরে যাওয়াতে ফসলের আবাদ শুরু করেছি। এ বছর প্রায় সকল কৃষকেরা রবিশস্যের আবাদে ব্যস্ত সময় পার করছেন। নদীর পানি নিচে নেমে যাওয়ায় শ্যালোমেশিন বসিয়ে পানি তুলে বীজ রোপণ করতে হয়। কয়েকদিনের মধ্যে পুরো চর সবুজ ফসলে ভরে উঠবে।’
পদ্মার চরে সরিষা ও পেয়াজের আবাদ করেছেন নগরীর দরগাপাড়া এলাকার কৃষক সুজন আলী। তিনি বলেন, পদ্মার চরটি নগরীর বিনোদনের কেন্দ্রবিন্দু হওয়ায় এখানে সাধারণ মানুষদের আনাগোনা অনেক বেশি হওয়ায় জমির ভেতরে মানুষেরা প্রবেশ করে। এতে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়। তবে আমরা এর বিকল্প চিন্তাও করছি।
রাজশাহীর পদ্মার চরে দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন ফসলের চাষ করে আসছেন নগরীর হোসেনীগঞ্জ এলাকার বাসিন্দা মডি। তিনি জানান, ‘অতীতে আমি কালাই ও খেসারির আবাদ করেছি। সেসব ফসলে লাভের মুখ খুব বেশি দেখা যায় না তাই এ বছর আমি বাধাকপি, ফুলকপি, সরিষা, বেগুন, গম ও ভুট্টার চাষ করেছি। আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই এসব ফসল ঘরে তোলার কাজ শুরু হবে। আবহাওয়া ভালো থাকলে আশা করি এবছর ভালো লাভের মুখ দেখবো’।
পাঠানপাড়া এলাকার জুলফিকার আলী বলেন, এই চর মূলত ইজারা নিতে হয়। এরপর চাষাবাদ করা শুরু হয়। এখানে বিভিন্ন রকমের ফসল ফলানো সম্ভব। আমি এবছর আখচাষ করছি। এগুলো বাজারে বিক্রি করাও সম্ভব। এছাড়াও লাউ, টমেটো, শিম চাষ করা হচ্ছে। যা রাজশাহীর ব্যবসায়ীরা কিনে সরাসরি ভোক্তাদের হাতে তুলে দিতে পারছেন। এতে টাটকা সবজিও খেতে পারবেন নগরবাসী।
রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক উম্মে ছালমা বলেন, আগে পদ্মার চরে হাতেগোনা কয়েকটি ফসল ফলতো। এখন নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হয়েছে। সময়ের পালা বদলে বিভিন্ন ধরনের ফসলের চাষ হচ্ছে পদ্মার জেগে ওঠা চরে। উৎপাদন খরচ কম হওয়ায় লাভও বেশি হচ্ছে কৃষকদের।