কুরবানির পশু বর্জ্য ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অপসারণের আশ্বাস দিয়েছে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। এ লক্ষ্যে প্রায় ১৯ হাজার ২৪৪ পরিচ্ছন্নকর্মী আজ (বৃহস্পতিবার) দুপুর থেকে বর্জ্য অপসারণের কাজ শুরু করেছে।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. আবু নাছের জানান, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন অধিক্ষেত্রভুক্ত এলাকায় কুরবানির পশুর হাটগুলো এবং কুরবানিকৃত পশুর সৃষ্ট বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কার্যক্রমসহ আনুষঙ্গিক বিষয়াদি সরেজমিনে তদারকির লক্ষে ডিএসসিসির উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে একটি তদারকি পরিষদ গঠন করা হয়েছে। ঈদুল আজহা উদযাপন উপলক্ষ্যে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ, পরিবহণ বিভাগ ও যান্ত্রিক বিভাগের সব স্তরের কর্মকর্তা/কর্মচারীসহ তদারকির দায়িত্বে নিয়োজিত অন্যান্য বিভাগের কর্মকর্তাদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে।
তিনি জানান, কুরবানির বর্জ্য ও সাধারণ বর্জ্য অপসারণে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নিজস্ব ৩৫৭টি বিভিন্ন ধরনের যান-যন্ত্রপাতি (পে-লোডার ১০টি, বেকহো-লোডার ৪টি, স্কিড লোডার ১টি, টায়ার ডোজার ৭টি, চেইন ডোজার ৩টি, ড্রাম্প ট্রাক ৯৬টি, কম্পেক্টর ৫৩টি পানিবাহী গাড়ি ৯টি ইত্যাদি) প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এছাড়াও পর্যাপ্ত হাতগাড়ি, বেলচা, কাটা ও টুকরিসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় মালামাল ওয়ার্ড পর্যায়ে সরবরাহ করা হয়েছে। সরকারি বিভিন্ন সংস্থা (রাজউক, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, বাংলাদেশ নৌবাহিনী, বাংলাদেশ বিমান বাহিনী, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ, সড়ক ও জনপদ অধিদপ্তর) থেকে সৌজন্যমূলক ২৪টি ভারী যন্ত্রপাতি নিয়োজিত থাকবে।
দক্ষিণ সিটির এই কর্মকর্তা জানান, কুরবানির বর্জ্য অপসারণে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৫ হাজার ৩০০ জন পরিচ্ছন্নকর্মী, ৭৫টি ওয়ার্ডে নিয়োজিত প্রাথমিক বর্জ্য সংগ্রহকারী প্রতিষ্ঠানের ৩ হাজার কর্মী এবং পশুর হাটের জন্য ৬৩০ জন বাইরের শ্রমিকসহ সর্বমোট প্রায় ৮ হাজার ৯৩০ জন পরিচ্ছন্নকর্মী পরিচ্ছন্নতা কাজে নিয়োজিত থাকবে। পশুর হাটের বর্জ্য, কুরবানিকৃত পশুর বর্জ্য অপসারণ এবং রাস্তাগুলো ধৌতকরণ পরবর্তী পর্যাপ্ত জীবাণুনাশক (স্যাভলন) ও ৩২ হাজার ৫০০ কেজি বা ১ হাজার ৩০০ ড্রাম ব্লিচিং পাউডার ছিটানোর জন্য ওয়ার্ডভিত্তিক ইতোমধ্যে সরবরাহ করা হয়েছে।
সুষ্ঠু ও স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে কুরবানির বর্জ্য অপসারণের লক্ষ্যে কুরবানি দাতাদের মধ্যে বিনামূল্যে ১ লাখ ৩০ হাজার চটের ব্যাগ বিতরণ করা হয়েছে। পশুর হাটে পশুদের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিতকরণে অসুস্থ পশু নির্বাচন এবং চিকিৎসা প্রদানে প্রতিটি পশুর হাটের জন্য একটি করে মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে এবং ২৬ জুন থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে মেডিকেল টিমের কার্যক্রম শুরু হয়। ইতোমধ্যে ১১০ গ্যালন (৫ লিটার) স্যাভলন বিতরণ করা হয়েছে। প্রয়োজন অনুযায়ী আরও ব্যবস্থা রাখা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
কুরবানির পশু বর্জ্য অপসারণের তথ্য জানতে ও জানাতে হটলাইন নম্বর চালু করেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। নম্বরগুলো হলো- ০১৭০ ৯৯০০ ৮৮৮, ০২২২ ৩৩৮ ৬০১৪।
এদিকে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) জনসংযোগ কর্মকর্তা মকবুল হোসাইন শিমুল জানান, আসন্ন কুরবানির পশু বর্জ্য অপসারণে জনসচেতনতা বাড়ানোর জন্য ২ লক্ষাধিক লিফলেট বিতরণ, প্রতিটি ওয়ার্ডে মাইকিং, প্রতিটি মসজিদের ইমাম সাহেবদের মাধ্যমে নামাজের পরে ও জুমা’র খুতবার সময় কুরবানি পশু জবাই এবং বর্জ্য অপসারণ বিষয়ে মুসল্লিদের উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে।
শিমুল জানান, কুরবানির বর্জ্য অপসারণের জন্য বিশেষ পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রমের আওতায় ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের নিজস্ব ২ লাখ ১১৭ জন এবং অন্যান্য বেসরকারি ব্যবস্থাপনাসহ সর্বমোট ১০ হাজার ৩১৪ জন কর্মী কুরবানির বর্জ্য অপসারণে নিয়োগ করা হয়েছে। এরমধ্যে অঞ্চল ভিত্তিক বর্তমান জনবলের সংখ্যা ২ হাজার ১১৭ জন, ৩৬টি ওয়ার্ডে পিডব্লিউসিএসপির কর্মী ৪ হাজার ৫০০ জন, ২৬টি ওয়ার্ডে বেসরকারি বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় ২ হাজার ৬৬৩ জন, স্পেশাল ক্লিনার ৪২২ জন এবং ওয়ার্ডভিত্তিক বর্জ্য সংগ্রহ কাজে ভাড়ায় নিয়োজিত পিকআপের কর্মী ৬১২ জন।
তিনি জানান, জবাইকৃত কুরবানির পশুর বর্জ্য তাৎক্ষণিকভাবে অপসারণ এবং কুরবানির পশুর হাটগুলো দ্রুত পরিষ্কারের লক্ষ্যে ঈদের আগের দিন থেকে ঈদের পরবর্তী ২ দিন নিরবচ্ছিন্নভাবে বর্জ্য অপসারণের জন্য বর্জ্যবাহী ড্রাম্প ট্রাক/খোলা ট্রাক, ভারী যান-যন্ত্রপাতি, পানির গাড়ি, বেসরকারি এবং ভাড়ায় পিকআপভ্যানসহ সর্বমোট ৬১৫টি গাড়ি নিয়োজিত রয়েছে।ল্যান্ডফিলে ঈদুল আজহার বর্জ্য পরিবেশসম্মত ডিসপোজাল নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে ৬টি এস্কেভেটর, ৪টি চেইন ডোজার, ২টি টায়ার ডোজার ও ১টি পে-লোডার নিয়োজিত রাখা হয়েছে। প্রতিটি ওয়ার্ডে ভ্যানগাড়িতে করে ব্লিচিং পাউডার ছিটানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে।
শিমুল জানান, বর্জ্য ব্যাগ, ব্লিচিং পাউডারসহ অন্যান্য পরিচ্ছন্নতার জন্য ব্যবহৃত উপকরণ ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের মাধ্যমে জনগণের মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে- পলিব্যাগ ৯ লাখ পিস, বায়োডিগ্রেডেবল পলিব্যাগ ১ লাখ পিস, ব্লিচিং পাউডার ২ হাজার ৪০০ বস্তা (৬৭ টন), স্যাভলন ৯০০ ক্যান (প্রতি ক্যান ৫ লিটার), টুকরী ৭ হাজার টি, ফিনাইল ১ হাজার ৬০০ লিটার (প্রতি ক্যান ১ লিটার)।
তিনি জানান, কুরবানি পশুর বর্জ্য অপসারণে প্লট-২৩-২৬, সড়ক-৪৬, গুলশান-২, নগর ভবন নিচতলায় অস্থায়ী কেন্দ্রীয় কন্ট্রোল রুম স্থাপন করা হয়েছে। কন্ট্রোল রুমের নম্বর: +৮৮০২৫৫০৫২০৮৪, ১৬১০৬।
শিমুল আরও জানান, কন্ট্রোল রুমের পাশাপাশি বর্জ্য অপসারণ কার্যক্রম তদারকি করার জন্য ২৪ সদস্যবিশিষ্ট একটি টিম গঠন করা হয়েছে। তাদেরকে তদারকি করার জন্য ওয়ার্ডভিত্তিক দায়িত্ব দেওয়া হবে এবং ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগসহ অন্যান্য সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তা/কর্মচারীরা ঈদের ছুটিকালীন কর্মস্থলে অবস্থান নিশ্চিত করা হয়েছে।