বুধবার | ১লা জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১৭ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সংবাদ সম্মেলন করায় বোনের বাড়িতে হামলা বিএনপি নেতার

 

নিজস্ব প্রতিবেদক: প্রথমে দোকানে হামলা হয়েছিল। থানায় অভিযোগ করার পর সংবাদ সম্মেলন করেছিল ভুক্তভোগী পরিবার। পরিবারটি রাজপাড়া থানায় মামলা করতে গেলে তা গ্রহণ করেনি পুলিশ। এর পরদিন সংবাদ সম্মেলন করাতে ভুক্তভোগী ব্যক্তির বাড়িতে আবার হামলার ঘটনা ঘটেছে। পুলিশের সামনে মারধরের ঘটনাও ঘটেছে।

রোববার (২৯ ডিসেম্বর) দুপুরে নগরীর ডিঙ্গাডোবা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। রাজপাড়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আশরাফুল ইসলাম বলছেন, ‘এজাহার দিতে বলা হয়েছে। মামলা হবে। আসামিকেও ধরা হবে।’

অভিযুক্ত ব্যক্তির নাম রওসনুর রহমান রোকন। তিনি এলাকার বিএনপি নেতা হিসেবে পরিচিত। নিজেকে নগর বিএনপির ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক বলে পরিচয় দেন। তবে নগর বিএনপির পূর্ণাঙ্গ কমিটিই নেই। তিনি ভাগ্নের দোকান দখলে নেওয়ার চেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ।

রোকনের বোনের নাম শামসুন নাহার রুনা। তিনি ক্যানসারের রোগী। শামসুন নাহারের স্বামী মতিউর রহমান পেশায় শিক্ষক। ছ’বছর ধরে স্ত্রীর ক্যানসারের চিকিৎসা করতে গিয়ে তিনি সর্বস্বান্ত। মায়ের চিকিৎসার অর্থ জোগাড়ে পাড়ার মোড়ে মুদির দোকান চালান তার ছেলে মাহমুদুল হাসান অন্তর।

শনিবার তার বাবা মতিউর রহমান সংবাদ সম্মেলন করে বলেন, শামসুন নাহারের বড় ভাই রওসনুর রহমান রোকন ও শফিউর রহমান মামুন তার ছেলে অন্তরের দোকানটি দখলে নিতে চান। এ জন্য শুক্রবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে দোকানে হামলা চালিয়েছেন। হামলায় প্রায় ৭ লাখ টাকার ক্ষতি করেছেন। এছাড়া নগদ ৫০ হাজার টাকা লুট করা হয়েছে।

শামসুন নাহার বলেন, বিরোধের সূত্রপাত ১১ বছর আগে। ৫ ভাই বোনদের মধ্যে আমার বাবা-মা আমাদের দুই বোনকে ১২ ছটাক করে একটি জমি লিখে দেন। আমার জীবিত বাবা-মায়ের নামে এখনো ৩ কাঠা জমি আছে যা আমার ৩ ভাই পাবেন। তবে সেই জমি দ্রুত লিখে নেওয়া এবং আমাদের দেওয়া জমি থেকে ১১ লাখ টাকা দাবি করেন রোকন। আমরা দুই বোন অযৌক্তিক সেই দাবি মেনে না নিলে আমার ভাই ক্ষিপ্ত হয়ে দোকান দখলের চেষ্টা করছেন।

রোববার মতিউর রহমান জানান, শনিবার সংবাদ সম্মেলন করার পর সন্ধ্যায় তিনি থানায় মামলা করতে গিয়েছিলেন। সংবাদ সম্মেলন করার কারণে ওসি বিরক্ত হয়েছেন। তিনি বলেছেন, “সংবাদ সম্মেলন করেছেন, সেটাই করেন। ওভাবেই বিচার নেন। থানায় আসা লাগবে না।”

মতিউর বলেন, পুলিশ বলছিল যে অপরাধের বিবরণ তাতে আসামি খালাস পেয়ে যাবে। মামলা করে লাভ নেই।

তিনি বলেন, তারপরেও আমি মামলা করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু মামলা না নিয়েই আমাকে বাড়ি পাঠানো হয়েছে। রোববার দুপুরে রোকন এবার বাড়িতে হামলা চালিয়েছেন। বাড়ির জিনিসপত্র ভাঙচুর করেছেন। একটা জানালা ভেঙেছেন। ভাড়া বাড়িতে থাকি, বাড়িওয়ালা কী বলবেন সেটাই চিন্তা করছি।

মতিউর জানান, হামলার পর তিনি থানায় ফোন করেছিলেন। তখন পুলিশ যায়। পুলিশের সামনেই রোকন তার ছেলে অন্তরকে মারধর করেন। পুলিশ এটা দেখে ওসিকে জানিয়েছেন। এখন ওসি মামলা নিতে চেয়েছেন। থানার একজন এসআই ফোন করে ডেকেছেন।

রাজপাড়া থানার ওসি আশরাফুল ইসলাম বলেন, শনিবার মামলা করার মতো ছিল না। রোববার আবার একটা ঝামেলা হয়েছে। মামলা করতে মতিউরকে এজাহার দিতে বলেছি। মামলা হবে। আসামিকেও ধরা হবে।

অভিযোগের ব্যাপারে কথা বলতে রোববার বিকালে রওসনুর রহমান রোকনকে ফোন করা হলে তিনি ধরেননি। আগের দিন শনিবার তিনি বলেছিলেন, মোবাইলে তিনি কোন কথা বলবেন না। নগর বিএনপির পদে না থাকলেও ধর্ম বিষয় সম্পাদকের পরিচয় দেওয়ার অভিযোগ নিয়ে তিনি বলেছিলেন, ‘আমি কী পদে আছি নিজেই জানি না। লোকজন বলে।’

Please Share This Post in Your Social Media



© 2023 priyorajshahi.com
Developed by- .:: SHUMANBD ::.