নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজশাহীর সারদায় বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমিতে প্রশিক্ষণরত ৪০তম ক্যাডেট উপপরিদর্শক (এসআই) ব্যাচের আটজনের কাছে কৈফিয়ত তলব করে চিঠি দেওয়া হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে প্রশিক্ষণ মাঠে উচ্চস্বরে হই চই করা এবং দৌড়ানোর বদলে হাঁটার অভিযোগ আনা হয়েছে।
পুলিশ একাডেমির অধ্যক্ষের পক্ষে পুলিশ সুপার (বেসিক ট্রেনিং-২) তানভীল সালেহীন ইমন কৈফিয়ত তলবের চিঠিতে রোববার (২৯ ডিসেম্বর) সই করেছেন।
একাডেমি সূত্র জানিয়েছে, সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা থেকে ক্যাডেটদের স্টাডি ক্লাস ছিল। সেখানেই একজন কনস্টেবল ওই ৮ প্রশিক্ষণরত এসআইয়ের হাতে কৈফিয়ত তলবের চিঠি ধরিয়ে দেন।
চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘গত শুক্রবার (২৭ ডিসেম্বর) বৈকালিক কার্যক্রমে নিয়মিত সাপ্তাহিক গেইম প্যারেড ছিল। গেইম প্যারেড শুরুর পূর্বে মাইকে সকল কোম্পানীর প্রশিক্ষণার্থীদের সুশৃঙ্খলভাবে গেইম প্যারেড করার জন্য বলা হয়। এই নির্দেশনা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আপনি উচ্চস্বরে হই চই করতে থাকেন এবং আপনার উষ্কানিমূলক কথাবার্তায় অন্যান্য ক্যাডেটগণ উত্তেজিত হয়ে হই চই করে।’
‘আরআই আপনাকে শান্ত থাকার জন্য নির্দেশনা দেয় এবং ঘটনার বিষয়টি এএসপি (পিটি) এবং অতিরিক্ত পুলিশ সুপারকে (ফিল্ড) মোবাইল ফোনের মাধ্যমে প্যারেড গ্রাউন্ডে আসার জন্য জানান। তারা আসেন এবং আপনাকে শান্ত থেকে সুশৃঙ্খলভাবে প্যারেড অনুশীলন করার জন্য দিকনির্দেশনা দেন। গেইম প্যারেড চালু হওয়ার সময় আপনার উস্কানিতে অন্যান্য প্রশিক্ষণার্থী ক্যাডেটগণ কর্তৃপক্ষের নির্দেশ অমান্য করে দৌড়ে না গিয়ে হেঁটে হেঁটে চলতে থাকে এবং শস্ত না হয়ে বিশৃঙ্খল পরিবেশ সৃষ্টি করে।’
চিঠিতে বলা হয়, ‘মাঠে আপনার এই ধরনের শৃঙ্খলাবিরোধী আচরণ বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমীর নিয়ম শৃঙ্খলার পরিপন্থী মর্মে সংশ্লিষ্ট কোম্পানীর অধ্যক্ষ বরাবরে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য লিখিত প্রতিবেদন দাখিল করেছেন। আপনার এমন কার্যকলাপের প্রেক্ষিতে আপনাকে কেন চলমান মৌলিক প্রশিক্ষণ হতে অব্যাহতি প্রদান করা হবে না তার সন্তোষজনক জবাব কৈফিয়ত তলবনামা প্রাপ্তির তিন দিনের মধ্যে দাখিলের জন্য নির্দেশ দেওয়া হলো।’
প্রশিক্ষণরত এসআইদের একটি সূত্র আটজনের কাছে এই কৈফিয়ত তলবের বিষয়টি উত্তরভূমিকে নিশ্চিত করেছে। তবে ফোন ধরেননি পুলিশ একাডেমির অধ্যক্ষ মাসুদুর রহমান ভুঞা। আর পুলিশের এআইজি (মিডিয়া) ইনামুল হক সাগর উত্তরভূমিকে বলেছেন, বিষয়টি তিনি এখনও জানেন না।
গত বছরের ৫ নভেম্বর ৪০তম এসআই ক্যাডেট ব্যাচের এক বছর মেয়াদী প্রশিক্ষণ শুরু হয়। মোট প্রশিক্ষণার্থী ছিলেন ৮২৩ জন। গত ৪ নভেম্বর তাদের প্রশিক্ষণ শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এখনও প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচাকাওয়াজের আয়োজন করা হয়নি। গত ২৬ নভেম্বর এসআইদের সমাপনী কুচকাওয়াজের জন্য দিন ঠিক করা হলেও পরে স্থগিত করে দেওয়া হয়।
সম্প্রতি তিন দফায় মোট ৩১৩ জন প্রশিক্ষণার্থী এসআইয়ের কাছে ব্যাখা তলবের পর তাদের অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। এরমধ্যে গত ২১ অক্টোবর ২৫২ জন, ৪ নভেম্বর ৫৮ জন ও ১৮ নভেম্বর ৩ জন ক্যাডেট এসআইকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। তাদের বিরুদ্ধে নাশতা না খেয়ে মাঠে হইচই করা এবং প্রশিক্ষণ চলাকালে অমনোযোগী থাকার অভিযোগ আনা হয়। কৈফিয়তা তলবের পর ‘সন্তোষজনক জবাব দিতে না পারার’ কারণ দেখিয়ে তাদের অব্যাহতি দেওয়া হয়।
সারদায় গত বছরের ২১ অক্টোবর ৪০তম বিসিএসে সুপারিশপ্রাপ্ত পুলিশ ক্যাডারের ৭১ জন কর্মকর্তার এক বছর মেয়াদী মৌলিক প্রশিক্ষণ শুরু হয়েছে। গত ২০ অক্টোবর এদের সমাপনী কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠিত হওয়ার তারিখ নির্ধারণ ছিল। কিন্তু আগের রাতে হঠাৎ সমাপনী কুচকাওয়াজ স্থগিত করে দেওয়া হয়। এরপর ২৪ নভেম্বর আবারও সমাপনী কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানের দিন ঠিক করা হয়। তবে ১৮ নভেম্বর আবারও কুচকাওয়াজ স্থগিত করা হয়।
পরে গত ১৫ ডিসেম্বর ২৫ জন প্রশিক্ষণরত এএসপিকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে। গত ২৬ নভেম্বর বিকেলে প্রশিক্ষণ চলাকালে তারা মাঠে দৌড় না দিয়ে এলোমেলোভাবে হেঁটেছেন বলে অভিযোগ আনা হয়েছে। এই এএসপিরা যে কোন সময় অব্যাহতির চিঠি পাওয়ার আতঙ্কে রয়েছেন।