রাবি প্রতিনিধি: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) পোষ্য কোটা নিয়ে বিতর্কের জেরে পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন আইসিটি সেন্টারে পরিচালক অধ্যাপক ড. সাইফুল ইসলাম। বহিরাগতদের নিয়ে প্রশাসনকে জিম্মির সঙ্গে জড়িতদের শাস্তিও চান তিনি। শুক্রবার (৩ জানুয়ারি) নিজের ফেইসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে করা এক পোস্টে এ দাবি জানান তিনি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ড. সাইফুল বলেন, এভাবে একটা বিশ্ববিদ্যালয় চলতে পারে না। প্রশাসনে কোনো স্বৈরাচারী বসেনি যে, তাদের ১২ ঘন্টা জিম্মি করে, বয়স্ক মানুষদের অপদস্ত করে দাবি আদায় করতে হবে। কোটা নিয়ে আমার মাথাব্যথা নেই। কিন্তু বহিরাগতদের নিয়ে এভাবে জিম্মি করে দাবি আদায়ের সঙ্গে জড়িতদের বিচার চাই। বিশ্ববিদ্যালয় একটি পরিবার। প্রশাসনের দায়িত্ব শিক্ষার্থীর পাশাপাশি কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শিক্ষকদেরও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। সেটা যেহেতু সম্ভব হচ্ছে না, সেহেতু পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছি।
ফেইসবুক পোস্টে এ অধ্যাপক লিখেছেন, আমার নিজস্ব আইডিওলজি আছে। রাজনৈতিক অবস্থানও আছে। কিন্তু আমার কর্মস্থল, ডিপার্টমেন্টের কলিগ ও ছাত্ররা-ছাত্রীরা জানে, আমি নীতির প্রশ্নে কারো সাথে কোনোদিন আপোষ করিনি। রাজনীতি করার উদ্দেশ্যে নয় বরং বিবেকের তাড়নায় দীর্ঘদিন ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে যুক্ত ছিলাম। সর্বদাই আমি নির্যাতন, নিপীড়নের বিরুদ্ধে ছাত্রদের পাশে দাঁড়িয়েছি।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জানে, আমি কখনোই পদলোভী নই। মাননীয় ভিসি স্যারের একান্ত ইচ্ছায় আমাকে রাবির আইসিটি সেন্টারের দায়িত্ব নিতে হয়েছে তাও ভেবেচিন্তে, অনেকদিন পর। প্রশাসনিক দায়িত্বকে আমি খুব ভয় পাই এই কারণে যে, আমার এতদিনের লালিত নীতি আদর্শের সাথে আপোষ করতে হয় কি না। দায়িত্ব নেয়ার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় মোটিভেশান যেটা আমাকে তাড়িত ও আকর্ষিত করেছে তা হলো মাননীয় ভিসি সালেহ হাসান নকীব স্যারের উচ্চ নৈতিকতা ও নির্ভীকতা।
তিনি আরও লিখেছেন, পোষ্যকোটা ইস্যুকে কেন্দ্র করে গতকাল রাবিতে যা ঘটে গেল তার জন্য আমি মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না। দুই শতাধিক শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারীকে (যাদের মধ্যে কয়েকজন নারী ও বয়োবৃদ্ধ অসুস্থ ছিলো) সালাউদ্দিন আম্মারের নেতৃত্বে বহিরাগতদের দ্বারা টানা ১২ ঘন্টা খাঁচায় আবদ্ধ করে জিম্মি করে রাখা হল।
পোষ্যকোটা থাকা না থাকা বিষয়ে আমার কোন বক্তব্য নেই। বিগত সময়ে আমার একাধিক পোস্টে আমার অবস্থান জানিয়েছি। কিন্তু যে কায়দায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে দাবী মানতে বাধ্য করা হল প্রশাসনের একজন হিসেবে এই অপমান অপদস্তকে আমি মেনে নিতে পারছিনা। আমি এর প্রতিবাদে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি পরিচালকের পদ থেকে পদত্যাগের ঘোষণা করছি। [আগামী সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসে অফিসিয়ালি আমার পদত্যাগপত্র প্রশাসনের কাছে পাঠিয়ে দেয়া হবে।
গত দুই মাস যাবত আম্মারের মত গুটিকয়েক ছাত্র অব্যাহতভাবে অছাত্রসুলভ রাবির শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী ও তাদের ফ্যামিলি নিয়ে অশালীন অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ ও কর্মসূচি পালন করে আসছে, তা কোনোক্রমেই মেনে নেয়ার মত না। আমি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে এর তীব্র প্রতিবাদ করছি এবং এর ন্যায্য বিচার দাবী করছি।
এরআগে, ১ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি কমিটির সভায় সহায়ক ও সাধারণ কর্মচারীর সন্তানের জন্য ১% পোষ্য কোটা রাখার সিদ্ধান্ত নেয়। ২ জানুয়ারী এ সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করে সকাল ১০টা থেকে প্রশাসন ভবনে তালা দিয়ে আন্দোলন শুরু করে শিক্ষার্থীরা। এতে বহিরাগত শিক্ষার্থীরাও অংশ নেন। প্রশাসন ভবনের গেটে সাউন্ড বক্স বাজিয়ে তাদের নাচ-গানও করতে দেখা যায়। ফলে দুই উপাচার্য, প্রক্টর, জনসংযোগ প্রশাসকসহ শতাধিক কর্মকর্তা কর্মচারী ভিতরে আটকা পড়েন।
ভোগান্তি কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। ১০ ঘন্টা অবরুদ্ধ থাকার পর ভবনের তালা ভাঙ্গার চেষ্টা করেন কর্মকর্তারা। ফলে উভয়ের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। রাত ৯টার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবনে এসে পোষ্য কোটা সম্পূর্ণ বাতিলের ঘোষণা দিতে বাধ্য হন উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ হাসান নকীব।