নাটোর প্রতিনিধি: নাটোর জেলায় বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) পানাসি প্রকল্পের অধীনে পুনঃখননকৃত ২৭৭ কিলোমিটার খালের সুফল পাচ্ছেন স্থানীয় কৃষকরা। খাল পুনঃখনন করার ফলে চলনবিল অধ্যুষিত সিংড়া উপজেলাসহ বিভিন্ন উপজেলায় খালের পানি ব্যবহার করে অল্প খরচে সেচ সুবিধার পাশাপাশি অধিক ফলন উৎপাদন করতে পারছেন কৃষকরা। একই সাথে খালে সংরিক্ষত মাছ শিকারের জন্য অবমুক্ত করা হয়েছে।
এদিকে পানাসি প্রকল্পের মাধ্যমে খাল সংস্কার ও ভূগর্ভস্থ সেচ নালা তৈরির মাধ্যমে জলাবদ্ধতা নিরসণ করে অধিক খাদ্যশস্য উৎপাদনে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম হাতে নিয়েছে বিএডিসি।
বিএডিসি অফিসের দেওয়া তথ্যমতে, পানাসি প্রকল্পের মাধ্যমে ২০২০-২১ অর্থবছর থেকে ২০২৩-২৪ অর্থ বছর পর্যন্ত নাটোর জেলায় ২৭৭ কিলোমিটার খাল/খাড়ি পুনঃখনন করা হয়েছে। এর মধ্যে শুধু চলনবিল অধ্যুষিত সিংড়া উপজেলাতেই ১৮৬ কিলোমিটার খাল পুনঃখনন করা হয়েছে। সিংড়ায় ১৫ হাজার হেক্টর জমি সেচ সুবিধার আওতায় আনা সম্ভব হয়েছে।
জেলাজুড়ে ৩৩ হাজার হেক্টর জমির জলাবদ্ধতা নিরসন হয়েছে। পুনঃখননকৃত খালের মধ্যে সিংড়া উপজেলায় তিশিখালী খাল, সোয়াইড় টু কদমা খাল, নিয়ামত খাল, শ্রীখন্ড খাল, বরবরিয়া খাল, লালপুর উপজেলায় গোপালপুর খাল, গুরুদাসপুর উপজেলায় বিলসা খাল, চাপিলা মির্জা মাহমুদ খাল উল্লেখযোগ্য।
খাল পুনঃখননের ফলে জেলায় অতিরিক্ত এক লাখ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য উৎপাদন সম্ভব হচ্ছে। এক ফসলি জমিগুলো বর্তমানে তিন ফসলি জমিতে রুপ নিয়েছে। এছাড়া, পানাসি প্রকল্পের মাধ্যমে ইতোমধ্যে ৪ কিলোমিটার ভূগর্ভস্থ সেচনালা তৈরি করে জলাবদ্ধতা নিরসণ করা হয়েছে।
স্থানীয়দের দাবি, জুলাই অভ্যুত্থানের আগে সিংড়ার খালগুলো প্রভাবশালীদের দখলে থাকায় পানি সেচ কাজে ব্যবহার ও খালে সংরক্ষিত মাছ শিকার করতে পারেনি স্থানীয়রা। জুলাই গণঅভুত্থানের পর খালের সকল সুবিধা পাওয়ায় ও রাস্তা ব্যবহার করতে পারায় স্বস্তি ফিরেছে কৃষকের মাঝে।
তবে অভিযোগ রয়েছে, জেলায় কোথাও কোথাও খাল দখলের পায়তারা করছেন স্থানীয়রা প্রভাবশালীরা। যদিও সেনাবাহিনী ও স্থানীয় প্রশাসনে খাল দখল ঠেকাতে মনিটরিং চালিয়ে যাচ্ছে।
সিংড়া উপজেলার হিজলী গ্রামের কৃষক রাকিব আল হাসান, আপেল, রবিউল ইসলাম, ছবিরণ বিবি জানান, খাল পুনঃখননের সকল সুবিধা এখন ভোগ করা যাচ্ছে। সেচ সুবিধা, মাছ শিকার, খালের পাড়ের রাস্তা দিয়ে যাতায়াত সুবিধাভোগও করা হচ্ছে। জুলাই অভ্যুত্থানের আগে স্থানীয় প্রভাবশালীরা খালগুলো দখলে রাখায় এতদিন বঞ্চিত ছিল কৃষকরা। এখন আমরা সব সুবিধা পাচ্ছি।
সিংড়া উপজেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক দাউদার মাহমুদ জানান, সাবেক সরকারের আমলে অপরিকল্পিত ও অনিয়মের মধ্য দিয়ে খাল পুনঃখনন করা হয়। সেসময় প্রভাবশালীদের দখলদারিত্বের কারণে কৃষকরা এর সুফল থেকে বঞ্চিত ছিল। এখনও সাবেক সরকারের দোসর খাল দখলে নেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে যা আমরা প্রতিহত করব।
বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন করপোরেশন নাটোর রিজিয়নের নির্বাহী প্রকৌশলী সাজ্জাদ হোসেন জানান, বিএডিসির পানাসি প্রকল্পের মাধ্যমে পুনঃখননকৃত খালের মাধ্যমে জেলায় ৩৩ হাজার হেক্টর জমির জলাবদ্ধতা নিরসণ করা সম্ভব হয়েছে। এছাড়া অতিরিক্ত ১ লাখ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য উৎপাদন হচ্ছে। চলনবিলসহ বিভিন্ন উপজেলায় খালের পানি সংরক্ষিত রয়েছে এবং কৃষকরা অল্প খরচে জমিতে সেচ দিয়ে অধিক ফলন উৎপাদন করতে পারছেন।
জলাবদ্ধতা নিরসণের কারণে বোরো মৌসুমে সরিষার আবাদ ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। পুনঃখননকৃত খালে দেশি মাছের ব্যপক উৎপাদন বেড়েছে। পাশাপাশি স্থানীয় কৃষকের মাঝে হাঁস পালনের আগ্রহ বৃদ্ধি পেয়েছে।