শনিবার | ১২ই এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৯শে চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পারাপারে গতি এলেও এখনই বাণিজ্যিক সুবিধা পাচ্ছে না রাজশাহী অঞ্চল

প্রিয় রাজশাহী ডেস্কঃ যোগাযোগে গতি আনতে যমুনায় রেলসেতু নির্মাণ হলেও এর পুরোপুরি সুফল পেতে বেগ পেতে হবে রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জকে। নাটোরের আব্দুলপুর থেকে রাজশাহী ডাবল লাইন নির্মাণ না হলে বাণিজ্যিক সুবিধা পাবে না গুরুত্বপূর্ণ এই দুই জেলার ব্যবসায়ীরা। কর্তৃপক্ষ বলছে, মাস্টার প্ল্যান অনুযায়ী ২০৪৫ সালের কথা। তবে আদৌ কাঙ্খিত বাণিজ্যিক সুফল মিলবে কি না- তা নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে।

পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ে সূত্রের তথ্যমতে, যোগাযোগের নতুন দ্বার ডুয়েল গেজ ডাবল ট্র্যাকে দৃশ্যমান হয়েছে দেশের বড় রেলসেতু। ৩ বছরের বেশি সময়ে প্রায় ১৬ হাজার ৭৮১ কোটি টাকায় নির্মিত হয়েছে সেতুটি। বৃহৎ এই অবকাঠামোর ফলে পশ্চিমাঞ্চল রেলের এক হাজার ৭০০ কিলোমিটার পথ ছুটে চলা ৪২টি আন্তঃনগর, ছয়টি আন্তঃদেশীয় ও ১৮টি মালবাহী ট্রেনকে আর থেমে যেতে হবে না সিরাজগঞ্জের যমুনা পাড়ে।

রেল গাড়ির এই নতুন সেতুকে ঘিরে উত্তরের মানুষের স্বপ্ন বেড়েছে অনেকগুণ। পণ্য পরিবহন হবে, এই অঞ্চলে বাড়বে শিল্পের বিনিয়োগ, একইসাথে রাজশাহী থেকে কনটেইনার ট্রেন চলবে চট্টগ্রাম বন্দর পর্যন্ত! পাশাপাশি কক্সবাজার পর্যন্ত এক্সপ্রেস ট্রেনের প্রত্যাশা এই অঞ্চলের মানুষের। তবে বাস্তবতা ভিন্ন। যমুনা রেল সেতু থেকে নাটোরের আব্দুলপুর জংশন পর্যন্ত প্রায় ৯১ কিলোমিটার পথ। যার মধ্যে মাত্র ২০ কিলোমিটারে আছে ডাবল রেল লাইন। পাশাপাশি এ পথে ৬৬টি ট্রেনকে পাসিং করতে গতি হারায় ট্রেন, নষ্ট হয় সময়। তাতে বাণিজ্যিক সুবিধা খুব বেশি হবে না বলছেন ব্যবসায়ীরা।

এছাড়া ট্রেনের গতি বাড়লেও নতুন কোনও ট্রেন যুক্ত হওয়ার সুখবর নেই। বরং নানা সংকটে অন্য রুটগুলোতে অনেক ট্রেন বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এমন বাস্তবতায় ২০৪৫ সালের মহাপরিকল্পনার (মাস্টার প্ল্যান) কথা কর্তাদের মুখে। যদিও সেই মাস্টার প্ল্যান কতটা বাস্তবায়ন হবে তা নিয়ে ব্যবসায়ী ও বিশিষ্টজনদের প্রশ্ন রয়েছে।

ব্যবসায়ী সংগঠনগুলো বলছে, যমুনা রেলসেতু পারাপারে গতি এলেও দুর্বল রেলপথের কারণে এখনই সে সুবিধা পাবে না রাজশাহী অঞ্চল। উত্তরের ভূগোলে রাজশাহী এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জের জন্য যমুনা রেলব্রিজের পূর্ণ সেবা পেতে প্রয়োজন আব্দুলপুর থেকে রাজশাহী পর্যন্ত ডাবল রেলের। তবে সে প্রকল্প কবে নাগাদ বাস্তবায়ন হবে, তা যেমন নিশ্চিত নয়, যমুনা রেলসেতুর পূর্ণ সেবা প্রাপ্তিও নিশ্চিত নয় রাজশাহী এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জের বাসিন্দাদের জন্য। তাই পূর্ণ সেবার অপেক্ষায় দুই অঞ্চলের মানুষ।

রাজশাহী চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি মাসুদুর রহমান রিংকু বলেন, আমাদের যমুনা রেল সেতু চালু হয়ে গেলে এটার বিষয়ে আমাদের জিএমদের সাথে বসতে হবে। কারণ এই অঞ্চলে যে ট্রেনের বগিগুলো দেবে সেগুলোতে আমরা ব্যবসার জন্য কী রকম সুযোগ-সুবিধা পাবো, জানার চেষ্টা করবো।

বাংলাদেশ রেশম শিল্প মালিক সমিতির সভাপতি লিয়াকত আলী বলেন, সারাদেশের অন্তত বিভাগগুলোতে যদি আমরা সরাসরি পৌঁছাতে পারতাম, তাহলে এই অঞ্চলের অর্থনৈতিক যে দুরবস্থা সেটা কিন্তু লাঘব হতো।

রহমান জুট মিলসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফজলুর রহমান বলেন, জুট মিলের যে প্রোডাক্টগুলো আমরা এক্সপোর্ট করি সেটা তো রাজশাহী থেকে একেবারে চট্টগ্রাম পোর্ট পর্যন্ত পৌঁছাতে হয়। স্টেশন থেকে আবার পরে পোর্টে নিয়ে যেতে হবে, সেক্ষেত্রে কেরিং খরচ ডাবল হেয় যাবে। সেজন্য পরিবহনের ক্ষেত্রে এটায় আমাদের খুব একটা লাভ হবে না।

রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক জামাত খাঁন বলেন, এক যুগের উপরে আমরা কিন্তু সরকারকে জানিয়ে আসছি যে, রাজশাহী অঞ্চলে ডাবল লাইনটা দিতে হবে। এটা না হলে কিন্তু ব্রিজ যেটা হচ্ছে বাস্তবায়ন হলেও আমরা মনে করি যে সুযোগ-সুবিধা থেকে আমরা বঞ্চিত হবো।

পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের মহাব্যবস্থাপক মামুনুল ইসলাম বলেন, যমুনা সেতু হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের ট্রেন বাড়ানো সম্ভব হবে না। কারণ এটি অনেকগুলো ফ্যাক্টরের উপর নির্ভর করে। আমাদের ২০৪৫ সাল পর্যন্ত একটা মাস্টারপ্ল্যান তৈরি করা হয়েছে। ওখানে ফেস বাই ফেস ইউনিগেজে চলে যাওয়ার একটা সম্ভাবনা আছে। দুইটি বন্দরের সাথে কানেকশন তৈরি করার একটি বিষয় আছে। অলরেডি মংলা বন্দরের সাথে কানেকশন তৈরি করে ফেলেছি। পোর্ট ফ্যাসিলিটিস পাওয়ার কারণে দুটি প্রজেক্টই আমাদের পাইপলাইনে আছে।

তিনি আরও বলেন, সিরাজগঞ্জ থেকে উত্তরাঞ্চলের যে জেলা আছে সেগুলোতে প্রায় ১২০ কিলোমিটার ঘুরে যেতে হয়। এখানে সময়ের সার্থে অর্থের একটা সম্পর্ক আছে। এদিক দিয়ে দেখলে এটা হলে এই অঞ্চলের আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নতি হবে। আর রাজশাহী থেকে আব্দুলপুর ফিজিবিলিটি স্টাডি চলছে। অলরেডি কিছু রিপোর্ট সাবমিট করা হয়েছে। প্রাথমিক একটা ধাপ বা ফান্ডিং সার্চ করার স্টেপ আমরা নিয়েছি।

Please Share This Post in Your Social Media



© 2023 priyorajshahi.com
Developed by- .:: SHUMANBD ::.