মঙ্গলবার | ২৪শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৯ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

গুঁড়িয়ে দেওয়া হলো সংগীতশিল্পী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের বাড়ি, ক্ষুব্ধ অনুরাগীরা

২০২২ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি প্রয়াত হন কিংবদন্তি সংগীতশিল্পী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়। তার মৃত্যুর এক বছর কাটতে না কাটতেই পশ্চিমবঙ্গের কলকাতার ডি-৬১৩ লেক গার্ডেনসের বাড়ি গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। হাতুড়ির আঘাতে ইট-কাঠ-দেরাজ-দালান চূর্ণ-বিচূর্ণ। এই বাড়িতে শিল্পী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় কাটিয়েছেন অনেকগুলো বছর, আজ সেই বাড়ির ভিতটুকুও অবশিষ্ট নেই।

কলকাতার লেক গার্ডেনসে যে জায়গায় সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের বাড়ি ছিল, সেখানে শুধুই কিছু ইট-কাঠের টুকরো ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে। শিল্পীর ব্যবহৃত কিছু সামগ্রীর ছবি ছড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। আর এই খবর ও ছবি ছড়িয়ে পড়তেই ক্ষুব্ধ হয়েছেন শিল্পীর অগণিত ভক্ত, অনুরাগীরা।
সংগীতশিল্পী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের বাড়ির ফটক। ছবি: সমকাল

গত বছর ফেব্রুয়ারি মাসে প্রয়াত হওয়ার পর অনেকেই মনে করেছিলেন সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের মতো প্রবাদপ্রতিম শিল্পীর বাসভবন সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে। এই বাড়ির মধ্য দিয়ে শিল্পীর বর্ণময় কর্মকাণ্ডের ইতিহাস জানতে পারবেন সংগীতপ্রেমী নয়া প্রজন্ম। কিন্তু সেসব কিছুই হলো না। বরং হাতুড়ির আঘাতে চৌচির হয়ে গেল শিল্পীর বাসস্থান। শিল্পীর ভক্তদের দাবি, যা হচ্ছে তা শিল্পীর মেয়ের সম্মতিতেই হচ্ছে। এ নিয়ে তাই বিতর্কের কোনো অবকাশ নেই। কিন্তু এমনটি না হলে ভালো হতো। অনুরাগীদের কেউ কেউ তাদের ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন। তাদের বক্তব্য, শিল্প ও শিল্পীর স্মৃতির চেয়ে হয়তো টাকার দাম বেশি। তাই এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

সঙ্গীত শিল্পী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় ১৯৩১ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি তিনি কলকাতা ঢাকুরিয়ায় জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৭০ সালে ‘জয় জয়ন্তী’ এবং ‘নিশিপদ্ম’ চলচ্চিত্রে গানের জন্য তিনি সেরা গায়িকা জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান। তিনি ১৭টি হিন্দি সিনেমায় কণ্ঠ দিয়েছেন। ব্যক্তিগত কারণে ১৯৫২ সালে তিনি কলকাতায় নিজ বাড়িতে ফিরে আসার সিদ্ধান্ত নেন। ১৯৬৬ সালে বিয়ে করেন বাঙালি কবি শ্যামল গুপ্তকে।

বাংলা আধুনিক গান ছাড়াও বাংলা সিনেমায় সঙ্গীত পরিবেশন করে হয়ে ওঠেন কিংবদন্তি। বিশেষ করে বাংলা চলচ্চিত্রের আরেক কিংবদন্তি মহানায়িকা সুচিত্রা সেনের কণ্ঠস্বর হিসেবে সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় পরিচিত হয়ে উঠেছিলেন বাঙালির ঘরে ঘরে। বাংলাদেশের জন্য বিশ্বব্যাপী সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যেও কাজ করেছিলেন সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়।

বাংলাদেশি সঙ্গীত শিল্পী সমর দাস, যিনি বাংলাদেশের স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র স্থাপন করেছিলেন, তার সাহায্যে বিভিন্ন দেশাত্মবোধক গান রেকর্ড করেন। কারাগারে বন্দি বাংলাদেশের প্রাণপুরুষ শেখ মুজিবুর রহমানের মুক্তির জন্য ‘বঙ্গবন্ধু তুমি ফিরে এলে’ গানটিতে কণ্ঠ দিয়েছিলেন কিংবদন্তি এ সঙ্গীত শিল্পী। তিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর প্রথম একুশে ফেব্রুয়ারি উদযাপন উপলক্ষে ঢাকার পল্টন ময়দানের উন্মুক্ত কনসার্টে অংশ নিয়েছিলেন ও তিনিই ছিলেন অন্যতম প্রথম বিদেশি শিল্পী।

Please Share This Post in Your Social Media



© 2023 priyorajshahi.com
Developed by- .:: SHUMANBD ::.