শনিবার | ১৯শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৬ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

রাজশাহীতে ব্যবসায়ীকে জেলে পাঠিয়ে দুটি গাড়ি ও অর্থ আত্মসাত

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ রাজশাহীর ব্যবসায়ী হোসেন আলী যখন কারাগারে ছিলেন, তখন তার ব্যাংক হিসাব থেকে শুধু টাকাই তুলে নেওয়া হয়নি; দুটি প্রাইভেটকারও দখলে নেওয়া হয়েছে। এছাড়া কারাগারে থাকা অবস্থায় একের পর এক মামলায় নাম দেওয়ার ভয় দেখিয়ে তার কাছ থেকে একটি বাড়িরও ‘পাওয়ার অব অ্যাটর্নি’ নেওয়া হয়েছে। গাড়ি দুটি বর্তমানে ছাত্রদল ও যুবদলের দুই নেতা ব্যবহার করছেন বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী হোসেন আলী।

শনিবার দুপুরে বাংলাদেশ ফটোজার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের রাজশাহী শাখা কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে তিনি এসব তথ্য জানান।

হোসেন আলীর বাড়ি নগরীর চণ্ডিপুর মহল্লায়। হোসেন আলীর অভিযোগ, তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু মাহমুদ হাসান শিশিল (৩৫), তার দুই ম্যানেজার মাহমুদ হাসান লিমন (২৮) ও তন্ময় হোসেন (৩১) গত ১০ আগস্ট তার গাড়িতে দেশীয় অস্ত্র ও দুই বোতল ফেনসিডিল রেখে ধরিয়ে দেন। ওই সময় তার কাছে থাকা চেক নিয়ে পুলিশের সহায়তায় জাল স্বাক্ষরে তিনটি ব্যাংক থেকে ৩৭ লাখ ১৫ হাজার টাকা তারা তুলে নিয়েছেন।

জেল থেকে বেরিয়ে গত ৫ ফেব্রুয়ারি এ ঘটনায় তিনি আদালতে মামলা করেছেন। মামলায় শিশিল, লিমন, তন্ময় ছাড়াও দুজন পুলিশ কর্মকর্তা ও দুই ব্যাংকের ব্যবস্থাপককে আসামি করা হয়েছে। এ নিয়ে গত ১০ ফেব্রুয়ারি গণমাধ্যমে ‘রাজশাহীতে ব্যাংক জালিয়াতি, কারাবন্দি ব্যবসায়ীর ৩৭ লাখ টাকা উধাও’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়।

সংবাদ সম্মেলনে ব্যবসায়ী হোসেন আলী দাবি করেন, তাকে মামলায় ফাঁসিয়ে টাকা তুলে নেওয়ার ঘটনার সঙ্গে মাহমুদ হাসান শিশিল ও মাহমুদ হাসান লিমন ছাড়াও নগর যুবদলের দপ্তর সম্পাদক সফিকুল মোহাম্মদ তন্ময়ও আছেন। মাহমুদ হাসান লিমন রাজশাহী নিউ গভ. ডিগ্রী কলেজ ছাত্রদলের সদস্য সচিব। তন্ময় ও লিমন তার দুটি গাড়ি ব্যবহার করছেন।

তিনি বলেন, আমি যখন জেলে তখন লিমন, সনি ও তন্ময়সহ কয়েকজন আমার বাসায় যায়। তারা বাড়ি থেকে আমার নামে বায়না করা দুটি বাড়ির কাগজপত্র, প্লটের ব্যবসার কিছু কাগজপত্র নিয়ে যায়। এর কিছুদিন পর আমার বাড়ির ভেতর থেকে আমার ছোট ভাই হানিফকে নিয়ে জোর করে রাস্তায় ধরে নিয়ে যায় এবং গাড়ির চাবি চায়। হানিফ তখন শিশিলকে ফোন করে বিষয়টি জানান। এ সময় শিশিল বলেন, ‘ভাল চাও তো দিয়ে দাও।’

পরে আমার ভাড়া করা পার্কিং থেকে দুটি গাড়ি তারা বের করে নিয়ে যায়। বর্তমানে গাড়ি দুটির একটি ব্যবহার করছেন যুবদল নেতা তন্ময়। অন্যটি ব্যবহার করছেন ছাত্রদল নেতা লিমন।

হোসেন অভিযোগ করেন, তিনি যখন জেলে ছিলেন, তখন তার জব্দ করা মোবাইলে লগইন থাকা অবস্থায় ফেসবুক আইডি থেকে ছাত্র-আন্দোলন দমনে রাজশাহীতে দুই হাতে গুলি চালানো সন্ত্রাসী জহিরুল হক রুবেলের ছবি পোস্ট করা হয়। ওই পোস্টে রুবেলের ছবির সঙ্গে লেখা হয়, ‘মাই বস’। এরপর তাকে একের পর এক রাজনৈতিক মামলায় আসামি করা হয়েছে।

তিনি জানান, নতুন এক মামলায় গ্রেফতার দেখানোর জন্য তাকে একদিন আদালতে তোলা হয়। সেখানে তন্ময়, শিশিল ও লিমন তার সঙ্গে দেখা করেন।

তারা বলেন, তার বাড়ির পাওয়ার অব অ্যাটর্নি তাদের নামে দিতে হবে। তা না হলে একের পর এক নতুন মামলা হতেই থাকবে। তিনি কোনোদিন বের হতে পারবেন না। রুবেলের নামে ১৬টি মামলা হয়েছে, তার নামেও হবে। পরে কারাগারে তার কাছে পাওয়ার অব অ্যাটর্নির কাগজ পাঠানো হয়। মামলা থেকে বাঁচতে তিনি ওই কাগজে স্বাক্ষর করে দেন। তারপর জামিনে বের হলেও ভয়ে এলাকায় থাকতে পারছেন না। তিনি এখনও আত্মগোপন করে থাকছেন।

হোসেন আলীর গাড়ি নিয়ে গিয়ে ব্যবহার করার অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ছাত্রদল নেতা লিমন বলেন, হোসেন আমাদের আমদানি-রপ্তানির ব্যবসার ম্যানেজার হিসেবে কাজ করত। সে মাত্র ৭ হাজার টাকা বেতন পেত। সে কিভাবে দুটি গাড়ির মালিক হলো? তার কোনো গাড়ি আছে কি না তা আমার জানা নেই। সে মিথ্যা অভিযোগ তুলেছে।

যুবদল নেতা তন্ময় বলেন, হোসেন আমার বন্ধু শিশিলের প্রতিষ্ঠানে চাকরি করত। সে আমার বন্ধুর অনেক টাকা মেরে দিয়েছে। তাই আমি আমার বন্ধুকে একটু সহযোগিতা করেছি। সে কারণে হয়তো আমার নাম বলছে। আসলে তার কোনো গাড়ির বিষয়ে আমি কিছু জানি না।

Please Share This Post in Your Social Media



© 2023 priyorajshahi.com
Developed by- .:: SHUMANBD ::.