প্রিয় রাজশাহী ডেস্কঃ যাত্রীদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে বিআইডব্লিউটিএ’র নির্দেশনা অনুযায়ী, প্রতিটি লঞ্চে প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থা রাখা বাধ্যতামূলক। নিয়ম রক্ষার্থে নদীতে লঞ্চ নামানোর আগে সনদ পেতে ‘প্রাথমিক চিকিৎসা ব্যবস্থা’র আয়োজন দেখানো হলেও পরবর্তী সময়ে এ বিষয়ে কোনও তোয়াক্কা করেন না লঞ্চের মালিকরা। অভিযোগ আছে, এ সংক্রান্ত নির্দেশনা দিয়েই দায়িত্ব পালনে সীমাবদ্ধ থাকে বিআইডব্লিউটিএ।
লঞ্চে প্রতিনিয়ত প্রাথমিক চিকিৎসা ব্যবস্থা সচল আছে কিনা, প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র ও চিকিৎসা সরঞ্জাম আছে কিনা, তার খোঁজ রাখে না কেউ।
যাত্রীদের অভিযোগ, যাত্রাপথে হঠাৎ কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে প্রাথমিক চিকিৎসা দিতে গাফিলতি করেন লঞ্চের স্টাফরা। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বেশিরভাগ লঞ্চেই প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার কোনও ব্যবস্থা নেই। আর যেসব লঞ্চে এ ব্যবস্থা আছে, সেগুলোও অকার্যকর।
প্রয়োজনীয় ওষুধ ও সরঞ্জাম থাকে না। আবার ওষুধ থাকলেও তা মেয়াদোত্তীর্ণ। ফলে প্রতিনিয়তই ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে লঞ্চ যাত্রীদের। বিশেষ করে নদীপথে দূরপাল্লায় যারা যাতায়াত করেন।
সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে প্রিন্স আওলাদ, সুন্দরবন ১২, সুন্দরবন ১৬, পারাবত, মানামী, সুরভী-৭, কাজল-৭, পূবালী-১২, বোগদাদীয়া-৭, মিতালী-৫ সহ মোট ২২টি লঞ্চ সরেজমিনে দেখা যায়, এগুলোর মধ্যে ৬টি লঞ্চে প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থা রয়েছে। তবে সেগুলোতেও নেই পর্যাপ্ত ওষুধপত্র, যা আছে তাও মানসম্পন্ন নয়। কোনোটির ওষুধ মেয়াদোত্তীর্ণ।
সুরভী-৭ লঞ্চে বরিশাল যাচ্ছিলেন রেবেকা খাতুন। তিনি জানান, বরিশাল থেকে ঢাকা, বা ঢাকা থেকে বরিশালে গত ১৫ বছর ধরে নিয়মিত লঞ্চে যাতায়াতে করেন তিনি। ছেলে-মেয়ে ঢাকায় থাকার সুবাদে বছরে তিন-চার ঢাকায় আসা-যাওয়া করতে হয়।
রেবেকা খাতুন বলেন, ‘লঞ্চে আগে প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থা থাকলেও এখন আর সেই সুবিধা পাই না। গত দুই-তিন বছরে চোখে পড়েনি বললেই চলে। যাতায়াতের সময় বুকে ব্যথা বা মাথা ব্যথার কারণে ওষুধ চাইতে গেলে লঞ্চের স্টাফরা জানান, ওষুধ শেষ হয়ে গেছে। বা যাত্রীর প্রয়োজনীয় ওষুধটি ছাড়া বাকি সব ওষুধ আছে, অভিজ্ঞতা থেকেই আমি এ কথা বলছি। এ ছাড়া লঞ্চে যেসব ওষুধ রাখা হয়, তা মানসম্মত না। অনেক ওষুধের আবার মেয়াদ থাকে না।’
মনিরুল ইসলাম নামে আরেক লঞ্চযাত্রী জানান, যাতায়াতের সময় অনেককে পেটে ব্যথা, বুকে ব্যথা, মাথা ব্যথা কিংবা গ্যাস্ট্রিকের ব্যথায় কাতরাতে দেখি। কিন্তু লঞ্চে কোনও ব্যবস্থা না থাকায়— এভাবেই প্রতিনিয়ত যাতায়াত করতে হয়। অথচ লঞ্চগুলোর সামনে সামনে লেখা থাকে— ‘এই লঞ্চে ফার্স্ট এইড বক্স আছে’।
মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘দেখা গেলো, লঞ্চের কোনও স্টাফকে প্রাথমিক ট্রিটমেন্টের বিষয়টি বললে তিনি অন্য স্টাফের রেফারেন্স দেন। বলেন, আমি এ ব্যাপারে জানি না। ফার্স্ট এইডের বক্স কোথায় আছে, তাও তারা বলতে পারেন না। যাত্রীর চিকিকৎসার বিষয়ে প্রায় সব স্টাফের আচরণই এক। এ ব্যাপারে তারা চরম অবহেলা করে।’
সুন্দরবন-১৬ লঞ্চে যাতায়াতকারী মুশফিক আবরার নামের এক যাত্রী বলেন, ‘প্রতিটা লঞ্চে কয়েকশ যাত্রী থাকেন। ডাক্তার রাখা না গেলেও অন্তত প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থা ঠিকঠাক রাখা উচিত। যেন যেকোনও প্রয়োজনে অন্তত প্রাথমিক চিকিৎসাটা নেওয়া যায়। আগে এই লঞ্চটিতে সিসিইউ পর্যন্ত ছিল। কিন্তু এখন ঠিকমতো প্রাথমিক চিকিৎসাও পাওয়া যায় না।
সিসিইউ রুমটি সব সময় বন্ধ থাকে। সেখানে ট্রিটমেন্টের ব্যবস্থা নেই। নামমাত্র একটি রুম পড়ে আছে। ওখানে লঞ্চের স্টাফরা ঘুমান।’
সুন্দরবন-১৬ লঞ্চের সুপারভাইজার মো. ইসমাইল বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমাদের লঞ্চে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার জন্য আগে সব ধরনের ব্যবস্থা ছিল। এখনও সিসিইউ রুম পর্যন্ত আছে। কিন্তু এখন আর কোনও ক্রিটিকাল রোগী পাওয়া যায় না, বা লঞ্চে আসে না।
পদ্মা সেতু হওয়ার কারণে রোগীরা বেশিরভাগ অ্যাম্বুলেন্সে করে সড়ক পথে যাতায়াত করেন। সে কারণে লঞ্চের সিসিইউ কক্ষে আপাতত কিছু নেই, খালি পড়ে আছে। তবে ফার্স্ট এইড বক্স আছে। হুট করে কারও কোনও সমস্যা হলে, সেই সমাধান দেওয়া যাবে।’
মানামী লঞ্চের স্টাফ তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘সব লঞ্চেই প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থা রাখা উচিত। যাত্রীদের কথা কী বলবো, আমরা নিজেরাও মাঝেমধ্যে অসুস্থ হয়ে পড়ি। তখন কিছুই করার থাকে না। লঞ্চে নিয়মিত ওষুধ না থাকায় বেকায়দায় পড়তে হয়। তবে নাপা ট্যাবলেট ও ওরস্যালাইন এগুলো থাকে। ব্যান্ডেজ করার মতো জিনিসপত্রও বোধহয় একটু-আধটু আছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘লঞ্চে থাকাবস্থায় স্টাফদের বড় কোনও ঝামেলা হলে ঢাকায় ফেরার অপেক্ষায় থাকি। পরে ঢাকায় আসলে ন্যাশনাল হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নেওয়া হয়।’
বিআইডব্লিউটিএ-এর প্রশাসন ও মানবসম্পদ বিভাগের পরিচালক কাজী ওয়াকিল নওয়াজ বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থা রাখার জন্য প্রতিটি লঞ্চে আমাদের নির্দেশনা দেওয়া আছে। প্রতিটি লঞ্চে জীবন রক্ষাকারী ওষুধ-সরঞ্জামসহ প্রাথমিক চিকিৎসা ব্যবস্থা থাকতে হবে।
নতুন কোনও লঞ্চ নদীতে নামাতে হলে আগেই এই শর্ত পূরণ করতে হয়। তারপর মালিকরা নদীতে লঞ্চ নামান।
তিনি বলেন, ‘দূরপাল্লার কোনও লঞ্চে যদি পর্যাপ্ত প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থা না থাকে, তাদের বিরুদ্ধে আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। শিগগিরই প্রত্যেকটি লঞ্চে প্রাথমিক চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করার ব্যাপারে ব্যবস্থা নেবো। সূত্রঃ বাংলা ট্রিবিউন।
প্রি/রা/শা