নিজস্ব প্রতিবেদকঃ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. এস তাহের হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি মো. জাহাঙ্গীর আলমের ফাঁসি কার্যকর স্থগিত চেয়ে আবেদন করা হয়েছে।
জাহাঙ্গীরের পরিবারের পক্ষে রাজশাহী কারা কর্তৃপক্ষের কাছে সোমবার (১০ জুলাই) সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এস এন গোস্বামী এ আবেদন পাঠিয়েছেন।
আবেদন বলা হয়েছে, নিহত ড. তাহেরের বাসার কেয়ারটেকার মো. জাহাঙ্গীর আলমের ফাঁসি কার্যকর স্থগিত চেয়ে হাইকোর্টে একটি রিট এখনো পেন্ডিং রয়েছে। এই রিট নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত তার ফাঁসি কার্যকর স্থগিত চাওয়া হয়েছে।
এদিকে বঙ্গভবন সূত্রে জানা গেছে, তাহের হত্যা মামলায় ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত দুই আসামির ক্ষমা প্রার্থনার আবেদন নাকচ করে দেওয়া হয়েছে। এখন নিয়ম অনুযায়ী যে কোনো সময় তাদের ফাঁসি কার্যকর করা হতে পারে।
এর আগে গত ৩ মে তাহের হত্যা মামলায় ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত একই বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মিয়া মোহাম্মদ মহিউদ্দিন ও কেয়ারটেকার মো. জাহাঙ্গীর আলমের রিভিউ আবেদন খারিজের রায় প্রকাশ করেন আপিল বিভাগ। প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন ৮ বিচারপতির বেঞ্চ ২১ পৃষ্ঠার এ রায় প্রকাশ করেন। এর ফলে এই দুই আসামির ফাঁসি কার্যকরে আইনি কোনো বাধা নেই। তাদের শুধুমাত্র রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চাওয়ার সুযোগ ছিল। ক্ষমা প্রার্থনার সেই আবেদনও নাকচ করে দেওয়া হয়।
এর আগে ২ মার্চ তাহের হত্যা মামলায় ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত দুই আসামির রিভিউ আবেদন খারিজ করে দেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন ৮ বিচারপতির পূর্ণাঙ্গ আপিল বেঞ্চ এ আদেশ দেন। সেসময় আদালতে রিভিউ আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এস এন গোস্বামী ও অ্যাডভোকেট এস এম শাহজাহান। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন, অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ মোহাম্মদ মোরশেদ।
আদালতে ড. তাহেরের স্ত্রী সুলতানা আহমেদ, মেয়ে অ্যাডভোকেট সেগুফতা আহমেদ, তাদের পরিবারের আইনজীবী অ্যাডভোকেট নাহিদ সুলতানা যুথি ও শাকিলা রওশন উপস্থিত ছিলেন।
গত বছরের ৫ এপ্রিল অধ্যাপক ড. এস তাহের হত্যা মামলায় একই বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মিয়া মোহাম্মদ মহিউদ্দিনের ফাঁসি বহাল রাখেন আপিল বিভাগ। একই সঙ্গে ড. তাহেরের বাসার কেয়ারটেকার মো. জাহাঙ্গীর আলমের মৃত্যুদণ্ড এবং অন্য দুই আসামির যাবজ্জীবন দণ্ডও বহাল রাখেন আদালত। যাবজ্জীবন সাজা বহাল থাকা দুজন হলেন নাজমুল আলম ও আব্দুস সালাম।
পরে এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে রিভিউ আবেদন করেন আসামিরা। সেই রিভিউ খারিজ করেন আপিল বিভাগ।
অধ্যাপক ড. তাহের হত্যা মামলায় ২০০৮ সালের ২২ মে রাজশাহীর দ্রুতবিচার আদালত চারজনকে মৃত্যুদণ্ড এবং দুজনকে বেকসুর খালাস দেন। আসামিরা এই রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করেন।
২০১৩ সালের ২১ এপ্রিল হাইকোর্ট দুই আসামির ফাঁসির দণ্ড বহাল রাখেন এবং অন্য দুই আসামির দণ্ড কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দেন।
২০০৬ সালের ১ ফেব্রুয়ারি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক এলাকার ম্যানহোল থেকে উদ্ধার করা হয় নৃশংসভাবে হত্যার শিকার অধ্যাপক ড. তাহেরের মরদেহ। এর দুদিন পর ওই বছরের ৩ ফেব্রুয়ারি নিহতের ছেলে সানজিদ আলভি আহমেদ রাজশাহী মহানগরীর মতিহার থানায় অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেন।
প্রি/রা/শা