আটলান্টিক মহাসাগরে ডুবোযান টাইটানে অন্তর্মুখী বিস্ফোরণে ৫ আরোহী নিহতের ঘটনা নিয়ে কানাডায় তদন্ত শুরু হয়েছে। শুক্রবার তদন্ত শুরুর এ ঘোষণা দেন কানাডার নিরাপত্তা নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তারা।
কিন্তু মহাসাগরের আন্তর্জাতিক সীমানায় ঘটা এ ঘটনায় নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষের ভূমিকার ধরণ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে বলে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে।
শুক্রবার দেওয়া বিবৃতিতে কানাডার পরিবহন নিরাপত্তা পরিষদ (টিএসবি) বলেছে, তারা টাইটানের সমুদ্র অভিযানের ‘পরিস্থিতি সম্পর্কিত নিরাপত্তা তদন্ত’ শুরু করছে, কেননা সমুদ্রপৃষ্ঠে এ ডুবোযানের যে নিয়ন্ত্রক জাহাজ ছিল, সেই পোলার প্রিন্স কানাডার পতাকাবাহী।
টিএসবি জানায়, তথ্য জোগাড় ও নানাজনের সাক্ষাৎকার নিতে দুর্ঘটনাস্থল থেকে প্রায় ৪০০ মাইল উত্তরে নিউফাইন্ডল্যান্ডের সেইন্ট জনসে টিএসবির একটি দলকে পাঠানো হয়েছে।
বৃহস্পতিবার মার্কিন কোস্ট গার্ডের কর্মকর্তা রিয়ার অ্যাডমিরাল জন মাগার সাংবাদিকদের বলেন, প্রাপ্ত ধ্বংসাবশেষের সঙ্গে ‘যানটির মারাত্মক অন্তর্মুখী বিস্ফোরণের’ সামঞ্জস্য পাওয়া গেছে। যার অর্থ দাঁড়াচ্ছে, ডুবোযানটি সমুদ্রের যে উচ্চতায় থাকার কথা, সেখান থেকেও আরও নিচে ডুবে যায় এবং ওই গভীরতায় পানির ভয়াবহ চাপে চুরমার হয়ে যায়।
নিহত ৫ আরোহীর মধ্যে টাইটানের পরিচালক প্রতিষ্ঠান যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ওশানগেইট এক্সপেডিশনসের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী স্টকটন রাশও আছেন। তিনিই ডুবোযানটি চালাচ্ছিলেন। এ ডুবোযানে করে টাইটানিকের ধ্বংসস্তূপ দেখতে এক একজনকে আড়াই লাখ ডলার দিতে হতো।
রাশের সঙ্গে ২০০৯ সালে ওশানগেইটের প্রতিষ্ঠা করা গুইলেরমো সোনলেইন বলেছেন, সমুদ্রের গভীরে অভিযান চালানোর বিপদ সম্পর্কে রাশ ‘গভীরভাবে সচেতন’ ছিলেন। স্টকটন আমার দেখা সবচেয়ে ঝানু ঝুঁকি ব্যবস্থাপক ছিলেন। তিনি খুবই ঝুঁকি-বিমুখ ছিলেন।
নিহতদের মধ্যে আরও আছেন ৫৮ বছর বয়সী ব্রিটিশ ধনকুবের ও অভিযাত্রী হামিশ হার্ডিং, পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিক ব্যবসায়ী শাহজাদা দাউদ ও তার ১৯ বছর বয়সী ছেলে সুলেমান এবং ৭৭ বছর বয়সী ফরাসী সমুদ্রবিজ্ঞানী পল-অঁরি নারজেল।
গত রোববার পানির নিচে থাকা জাহাজ টাইটানিকের শতাব্দী পুরনো ধ্বংসাবশেষ দেখাতে পর্যটকদের নিয়ে ডুব দিয়েছিল টাইটান, কিন্তু যাত্রার পৌনে দুই ঘণ্টার মধ্যে নিয়ন্ত্রক জাহাজের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে নিখোঁজ হয় ডুবোযানটি।
কয়েকদিনের টানা অনুসন্ধানের পর বৃহস্পতিবার উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরের তলে টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষের অদূরে টাইটানের ধ্বংসাবশেষ পায় কানাডার একটি রোবোটিক ডাইভিং যান।
পরে উদ্ধার কাজে নেতৃত্ব দেওয়া মার্কিন কোস্ট গার্ড জানায়, একটি অন্তর্মুখী বিস্ফোরণে টাইটান ধ্বংস হয়েছে। এ ঘটনায় ডুবোযানটির পাঁচ আরোহীর সবার মৃত্যু হয়। এর মাধ্যমে ডুবোযানটি উদ্ধারে টানা ৫ দিন ধরে চলা আন্তর্জাতিক অভিযান শেষ হয়।
১৯১২ সালে ইংল্যান্ডের নিউ সাউদাম্পটন থেকে নিউ ইয়র্কের উদ্দেশে প্রথম যাত্রায় বিশাল আইসবার্গের ধাক্কায় ডুবে গিয়েছিল তখনকার সবচেয়ে বড় যাত্রীবাহী জাহাজ টাইটানিক, প্রাণ গিয়েছিল দেড় হাজার মানুষের।