রাজশাহী-৪ (বাগমারা) আসনের সরকার দলীয় এমপি এনামুল হকের বিরুদ্ধে মনোনয়ন পাইয়ের দেয়ার নামে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে।। দুর্গাপুর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল মোতালেবের ছেলে জাহাঙ্গীর আলম এ অভিযোগটি করেছেন। আব্দুল মোতালেব দুর্গাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি। জাহাঙ্গীর আলম দুর্গাপুর উপজেলার কৃষকলীগের সহ-সভাপতি। জাহাঙ্গীর আলমের বাবা আব্দুল মোতালেব গত ১৩ জুন ঢাকায় গিয়ে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের কাছে এ অভিযোগ করেন। এসময় জাহাঙ্গীর আলমও সেখানে উপস্থিত ছিলেন।
অভিযোগ বলেন, গত ২০২১ সালের নির্বাচনে তিনি দুর্গাপুর পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন। সেই লক্ষ্যে তিনি বাগমারার এমপি এনামুল হকের সাথে যোগাযোগ করেন। এর পর এমপি জাহাঙ্গীরকে সর্বোচ্চ সহযোগীতা করার আশ্বাস প্রদান করেন। পাশাপাশি ১০ লাখ টাকা টাকা দিলে দলের মনোনয়ন কনফার্ম হওয়ার আশ্বাস দেন। তাঁর কথায় ২০২১ সালের ২৮শে জানুয়ারী ডাচ্-বাংলা ব্যাংক ধানমন্ডি শাখা থেকে ১০ লাখ টাকা উত্তোলন করে এমপির হাতে তুলে দেন জাহাঙ্গীর আলম। এসময় জাহাঙ্গীরের সঙ্গে ছিলেন বঙ্গবন্ধু পেশাজীবী পরিষদ রাজশাহী জেলা শাখার সভাপতি ইকবাল হোসেন, দুর্গাপুরের মাড়িয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আব্দুল হক। তাঁদের উপস্থিতিতে টাকাগুলো এমপি এনামুলের ব্যক্তিগত কার্যালয় পান্থপথ এনা টাওয়ারে গিয়ে তাঁর হাতে দিয়ে আসেন জাহাঙ্গীর আলম।
টাকাগুলো এমপি নিজ হাতে নিয়ে বাগমারার উদ্দেশ্যে বিমানবন্দরে চলে যান। এর পর ৩০ জানুয়ারি গণভবনের মনোনয়ন বোর্ড থেকে অপরপ্রার্থীর নাম ঘোষণা হয়। এর পর জাহাঙ্গার আলম এমপি এনামুলকে বিষয়টি নিয়ে ফোন করলে তিনি বলেন, ‘চিন্তা করো না আমি আছি তো।’
জাহাঙ্গীর আলম অভিযোগ আরও উল্লেখ করেন, এমপির ওই কথা শোনার পরে টাকা ফেরত পাওয়ার আশায় থাকি। এর পর টাকার জন্য এমপি এনামুলের কাছে ঘুরতে থাকি। কিন্তু টাকা ফেরত দেওয়ার কথা বলে এমপি কখনো ঢাকায়, আবার কখনো রাজশাহীতে ডেকে নিয়ে ঘুরাতে থাকেন। একপর্যায়ে এমপি বলেন, টাকা নেতাদের দিয়ে দিয়েছি, তারা তো ফেরত দিবে না। আমি কোথায় থেকে দিব। তার চেয়ে তুমি সামনে ইউনিয়ন নির্বাচনের একজন প্রার্থী সংগ্রহ কর আমি তাঁকে মনোনয়ন নিয়ে দিব। সেখান থেকে তুমি তোমার টাকা ফেরত নিও।’
জাহাঙ্গীর আলম ওই অভিযোগে আরও উল্লেখ করেন, ২০২২ সালের ইউনিয়ন নির্বাচন এর তফসিল হলে দুর্গাপুরের মাড়িয়া ইউনিয়নের জন্য আব্দুল হককে চেয়ারম্যান পদে মনোনয়ন এমপি এনামুল হকের দ্বারস্থ হন জাহাঙ্গীর আলম। তোমাদের কোনো টাকা লাগবে না। টাকাতো দেওয়া আছে। শুধু দপ্তর সম্পাদককে দেওয়ার জন্য এক লক্ষ টাকা দাও। এমপির কথামতো আবারও এক লাখ টাকা দেওয়া হয় তাঁর হাতে। কিন্তু সে পর্যন্ত আব্দুল হকও মনোনয়ন পাননি। এর পর সব টাকা ফেরত চাইলে এমপি তা ফেরত দেননি। এসব বিষয়ে অবগত আছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ^বিদ্যালয়ের তৎকালীন প্রকটর প্রফেসর ডাঃ সৈয়দ মোজাফফর আহমেদ। টাকাগুলো ফেরত দেওয়ার ব্যাপারে তিনিও এমপি এনামুল হক অনুরোধ করেছেন। কিন্তু তাঁর কথায় রাখেননি এমপি।
জাহাঙ্গীর আলম তাঁর ওই অভিযোগে আরও উল্লেখ করেছেন, বর্তমানে আমার বাবা দুরারোগ্য ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত। এমতবস্থায় টাকা ফেরত পেলে আমার বাবার ব্যায়বহুল চিকাৎসার খরচ মেটানো যেতো। আমার আর্থিক অবস্থা বিবেচনা করে এমপি এনামুল হকের নিকট থেকে ১১ লাখ টাকা উদ্ধারে সহযোগীতা করার জন্য দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে অনুরোধ জানান জাহাঙ্গীর আলম।
তবে এখন পর্যন্ত তিনি ওই টাকা ফেরত না পেয়ে বাবার চিকিৎসা করাতে পারছেন না বলেও গতকাল কালের কণ্ঠকে জানিয়েছেন। তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘আমরা অভিযোগ দেওয়ার পরে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সঙ্গে সঙ্গে বিষয়টি সমাধানের জন্য রাজশাহী বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম কামালকে দায়িত্ব দেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত তিনিও আমার টাকার ব্যবস্থা করে দিতে পারেননি।’
জানতে চাইলে দুর্গাপুরের মাড়িয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আব্দুল হক বলেন, আমার সামনেই টাকাগুলো দেয়া হয়েছিলো। কিন্তু জাহাঙ্গীরকে মনোনয়ন পাইয়ে দিতে পারেননি এমপি এনামুল।
জাহাঙ্গীরের বাবা আব্দুল মোতালেব বলেন, টাকাগুলো ফেরতের আশায় শেষ পর্যন্ত দলের সাধারণ সম্পাদকের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। তিনি বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামালকে দায়িত্ব দিয়েছেন। আশা করছি টাকাগুলো এখন ফেরত পাবো। টাকা পেলে আমার ক্যান্সারের চিকিৎসাটা করাতে পারবো।
ডাক্তার সৈয়দ মুজাফফর আহমেদ বলেন, ‘আমি বিষয়টি জানি। তবে এমপিকে টাকা ফেরত দেয়ার বিষয়ে অনুরোধ করতে পারেনি। কারণ তিনি আমার খুব ক্লোজ। আবার বিষয়টি স্পর্শকাতর হয় জাহাঙ্গীর আলমের কথায় এমপিকেও টাকা ফেরতের কথা বলতে পারিনি। তবে আমার কাছে খারাপ লাগে।’
জানতে চাইলে এমপি এনামুল হক বলেন, এই ধরনের অভিযোগের কোনো ভিত্তি নাই। আমি মনোনয়ন দেওয়ার নামে কারো নিকট থেকে টাকা নেয়নি। জাহাঙ্গীরকে আমি চিনিই না।’ তবে জাহাঙ্গীরের সঙ্গে এমনি এনমাুলের বেশকিছু ছবিও রয়েছে। এমপির ব্যক্তিগত কার্যালয়ে ছাড়াও বিভিন্ন স্থানে এসব ছবি তুলা হয়েছে বলে দাবি করেন জাহাঙ্গীর।
দলের সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম কামালের কাছে বিষয়টি জানতে চাইলে বলেন অভিযোগ পেলে বিষয়টি দেখবো।