নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজশাহীতে অ্যানেস্থেসিওলজিস্টদের ফি বৃদ্ধির প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য অস্ত্রোপচার (অপারেশন) বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন রাজশাহীর বেসরকারি ক্লিনিক ও হাসপাতাল মালিকরা।
বুধবার সন্ধ্যায় সংবাদ সম্মেলন করে বিষয়টি নিশ্চিত করেন বাংলাদেশ প্রাইভেট ক্লিনিক, হসপিটাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের রাজশাহী শাখার নেতারা।
এর আগে গত ৪ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ সোসাইটি অব অ্যানেস্থেসিওলজিস্ট (বিএসএ) রাজশাহী শাখা বিভিন্ন বেসরকারি ক্লিনিক ও হাসপাতালে পারিশ্রমিকের (ফি) নতুন তালিকা পাঠালে দুইপক্ষের মধ্যে দরকষাকষি ও মনোমালিন্যের সৃষ্টি হয়।
নতুন তালিকার বিরোধিতা করায় ক্লিনিক মালিকদের সংগঠনকে বিএসএ রাজশাহী শাখার সভাপতি অধ্যাপক জামিল রায়হান ও সাধারণ সম্পাদক ডা. মো. খিজির হোসেনের স্বাক্ষরিত একটি চিঠি পাঠানো হয়।
ওই চিঠিতে দাবি করা হয়- ক্লিনিক মালিকরা অ্যানেস্থেসিওলজিস্টদের সম্মানী নির্ধারণ করতে পারেন না, যেভাবে ক্লিনিকের কোনো অপারেশনের খরচ অ্যানেস্থেসিওলজিস্টরা নির্ধারণ করতে পারেন না। তদুপরি চিকিৎসার খরচ বহন করে রোগীরা, ক্লিনিক মালিকরা নয়।
সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ প্রাইভেট ক্লিনিক, হসপিটাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের রাজশাহী শাখার যুগ্ম সম্পাদক ডা. খন্দকার গোলাম মোস্তফা বলেন, অ্যানেস্থেসিওলজিস্টরা যে নতুন ফি নির্ধারণ করছেন তা বর্তমান ফির দ্বিগুণ। এই রেট বাস্তবায়ন হলে রোগীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন, সেই সঙ্গে বেসরকারি ক্লিনিক ও হাসপাতালগুলোও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। যেখানে একজন প্রসূতির সাধারণ অপারেশনে অ্যানেস্থেসিওলজিস্ট ডাক্তার নিতেন ১৩০০ থেকে ২০০০ টাকা। সেই ফি তারা বাড়িয়ে করেছেন ২৫০০ থেকে ৩০০০ টাকা।
বাংলাদেশ প্রাইভেট ক্লিনিক, হসপিটাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের রাজশাহী শাখার সাধারণ সম্পাদক মুখলেছুর রহমান শাহ দাবি করে বলেন, ‘অ্যানেস্থেসিওলজিস্টরা যে রেট নির্ধারণ করছেন তা বাস্তবায়ন করলে চিকিৎসা ব্যয় বৃদ্ধি পাবে। ফলে অনেক মানুষের, বিশেষ করে নিম্নআয়ের মানুষের চিকিৎসা খরচ সাধ্যের বাইরে চলে যাবে।’
তিনি আরও বলেন, বিএসএর দেওয়া রেট অনুসারে অ্যানেস্থেসিওলজিস্টরা বর্তমান ফির চাইতে দ্বিগুণ ফি দাবি করছেন। এর প্রতিবাদে আমরা বৃহস্পতিবার থেকে রাজশাহী নগরীর সব বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোতে সব ধরনের ওটি (অপারেশন) করা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এ সিদ্ধান্ত আমরা রোগীদের স্বার্থেই নিয়েছি। অ্যানেস্থেসিওলজিস্টরা আমাদের সঙ্গে আলোচনায় বসে বিষয়টির সমাধান না হওয়া পর্যন্ত এ সিদ্ধান্ত বলবৎ থাকবে।
অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ডা. আব্দুল মান্নান বলেন, সার্জনরা (অপরাশেন চিকিৎসক) অপারেশনের জন্য রোগীর সঙ্গে আর্থিক বিষয়গুলো নির্ধারণ করে থাকেন। অ্যানেস্থেসিওলজিস্টদের ফিও দিয়ে থাকেন সার্জনরা। এখানে আমাদের কিছু করার নাই।
এদিকে বিএসএ রাজশাহী শাখার সাধারণ সম্পাদক ডা. মো. খিজির হোসেন বলেন, ২০১৬ সালের পর আমাদের ফি আর বৃদ্ধি করা হয়নি। ক্লিনিক ও হসপিটাল মালিক পক্ষ অপারেশনের সময় অ্যানেস্থেসিওলজিস্টদের নামে রোগীদের কাছ থেকে বেশি টাকা আদায় করেন। আমরা তাদের বলেছি আমাদের নামে (অ্যানেস্থেসিওলজিস্ট) নেওয়া টাকা আমাদের দিতে হবে।
নতুন ফি বৃদ্ধির চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, বর্তমানে প্রসূতিদের সিজার করতে অ্যানেস্থেসিওলজিস্টরা পান ১৫০০ থেকে ২০০০ টাকা। আমরা সেই ফি ২৫০০ টাকা করার দাবি জানিয়েছি। অথচ ক্লিনিক মালিকরা বলছেন, আমরা নাকি দ্বিগুণ ফি বৃদ্ধির দাবি করছি।
প্রি/রা/আ