নিজস্ব প্রতিবেদক : ফেব্রুয়ারিতে রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকারের একটি অশ্লীল ভিডিও ইন্টারনেটে ভাইরাল হয়। পর্নো ভিডিও ভাইরালের পর তাকে দল থেকে বহিষ্কারের জোর দাবি ওঠে। এই দাবিতে দলীয় নেতাকর্মীসহ বিভিন্ন সংগঠনের উদ্যোগে বিক্ষোভ সমাবেশ হয়। দলের অনেক নেতা প্রকাশ্যে ডাবলু সরকারকে দল থেকে বহিষ্কারের দাবি তোলেন। তারপরও ডাবলু সরকারের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক পদক্ষেপ গ্রহণ থেকে বিরত থাকে দলীয় হাইকমান্ড। এই সময়ে ডাবলু অনেকটা সঙ্গীহীন ও চুপচাপই ছিলেন।
গত আট মাস ডাবলু সরকারকে রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের কোনো দলীয় কর্মসূচিতে দেখা যায়নি। এতদিন সচেতনভাবে তাকে এড়িয়েই চলেছে দলীয় নেতাকর্মীদের বড় অংশ। বলা যায় অনেকটা একঘরে অবস্থায় ছিলেন তিনি। ডাবলু সমর্থক নেতাকর্মীরাও রাজশাহীতে দলের রাজনীতিতে বেশ কোণঠাসা অবস্থায় ছিলেন। তবে হঠাৎই ডাবলু শিবির চাঙ্গা হয়ে উঠেছে।
২৬ সেপ্টেম্বর রাজশাহী মহানগর ও জেলা যুবলীগের সম্মেলন মঞ্চে ডাবলু সরকারকে বিশেষ অতিথি করা হয়। কেন্দ্র থেকে রাজশাহীতে পাঠানো সম্মেলনের পোস্টারেও ডাবলুর নাম ওঠে। আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সিদ্ধান্তে ডাবলু সরকারকে মঞ্চে অতিথি হিসাবে স্থান দেওয়া হয়। সম্মেলনে ডাবলু সরকার অতিথি হিসাবে বক্তব্যও দেন। এ ঘটনার পর রাজশাহীতে ডাবলু সমর্থকরা পুরোপুরি চাঙ্গা হয়ে উঠেছেন। বিপরীতে ডাবলুর প্রতিপক্ষ মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন সমর্থকদের মাঝে হতাশা বিরাজ করছে। অশ্লীল ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার পর লিটন সমর্থকরা ধারণা করেছিলেন ডাবলু সরকারকে দল থেকে বহিষ্কার করা হবে। তিনি আর রাজনীতিতে সক্রিয় হতে পারবেন না। তবে ঘটল উলটো ঘটনা।
দলীয় সূত্রে জানা যায়, রাজশাহীতে আওয়ামী লীগের সক্রিয় দুটি ধারার মধ্যে একটি হচ্ছে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন গ্র“প এবং অপরটি হচ্ছে সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকারের গ্র“প। রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের একটি অংশকে ডাবলু সরকার নিয়ন্ত্রণ করেন। নগরীতে ডাবলুর রয়েছে পৃথক রাজনৈতিক বলয়। অভিযোগ রয়েছে ক্ষমতায় ভর করে ডাবলু সরকার বিপুল বিত্তবৈভবের অধিকারী হয়েছেন গত ১৫ বছরে। ডাবলু আগামী নির্বাচনে রাজশাহী-২ (সদর) আসন থেকে দলীয় মনোনয়ন চাইবেন বলেও তার ঘনিষ্ঠ অনুসারীদের দাবি। ডাবলু এখন সেই প্রস্তুতি নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন।
রাসিক মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করেন। আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের সিংহভাগই লিটনের নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করেন। কেন্দ্রীয় নির্দেশনার পরও লিটন অনুসারীরা ডাবলু সরকারকে এড়িয়ে চললে কেন্দ্র সেটাকে কীভাবে নেবে তা নিয়ে কিছুটা শঙ্কিত সাধারণ নেতাকর্মীরা। ডাবলুর বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি লিটন।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী কামাল বলেন, বিষয়টি কিছুটা জটিল। সাধারণ বিবেচনায় কেউ দলে থাকলে দল করতে তার বাধা থাকার কথা নয়। তবে নেতাকর্মীরা বিষয়টিকে কীভাবে নেবেন সেটি অবশ্য ভাবার বিষয় হতে পারে। সময় হলে বিষয়টি পরিষ্কার হবে।
বিষয়টি সম্পর্কে আওয়ামী লীগের রাজশাহী বিভাগের দায়িত্বে নিয়োজিত সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম কামাল হোসেন বলেন, ডাবলুকে দল বহিষ্কার করেনি। সুতরাং যে কোনো দলীয় কর্মসূচিতে অংশগ্রহণের তার অধিকার আছে। আমরা চাই সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে দলকে শক্তিশালী করতে একযোগে কাজ করবেন সূত্র: যুগান্তর
প্রি/রা/আ