বুধবার | ২৫শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১০ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নওগাঁয় আম-লিচুর মধ্যেও গরমে বেড়েছে তালশাঁসের কদর

‘ঐ দেখা যায় তাল গাছ, ঐ আমাদের গাঁ, ঐ খানেতে বাস করে কানা বগির ছা।’ গাঁয়ে এখন বকের ছানা থাক আর না থাক, তালগাছগুলো কিন্তু কচি তালে ভরে গেছে। গ্রামের চৌহদ্দি ছাড়িয়ে তা আসতে শুরু করেছে শহরের অলিগলিতে। তীব্র গরমে তৃষ্ণা মেটাতে শহুরে মানুষের কাছে বেড়েছে তালশাঁসের কদর।

জ্যৈষ্ঠের শুরু থেকেই দেশের অন্যান্য অঞ্চলের মতো নওগাঁ শহরের পাড়া-মহল্লা ও বাজারগুলোতে ফলের দোকানে নানা ধরনের সুস্বাদু ফলের দেখা মেলে। এরই মধ্যে বাজারে নানা জাতের লিচু ও আম এসেছে। তবে এসব ফলের বাইরে পাড়া-মহল্লার ভ্যানগাড়ি ও বিভিন্ন রাস্তার মোড়ে মোড়ে ধুম পড়েছে কচি তালের শাঁস বিক্রির।

সকালে নওগাঁ শহরের পৌরবাজার, শহরের ব্রিজের মোড়, মুক্তির মোড় ও তাজের মোড় এলাকা ঘুরে দেখা যায়, নানা ধরনের ফলের পাশাপাশি বিক্রি হচ্ছে সুস্বাদু পুষ্টিসমৃদ্ধ কচি তালের শাঁস। ছোট-বড় প্রকারভেদে প্রতিটি তালশ্বাসের দাম পাঁচ থেকে ছয় টাকা। বিক্রেতারা জানান, আম-লিচুসহ অন্য মৌসুমি ফলের ক্ষেত্রে রাসায়নিক ব্যবহারের আশঙ্কা থাকে। কিন্তু তালশাঁস দীর্ঘ সময় তরতাজা রাখতে এসবের প্রয়োজন হয় না। ফলে গরমে তৃষ্ণা মেটাতে ও পুষ্টি চাহিদা পূরণে সচেতন মানুষ নিজে খাওয়ার পাশাপাশি পরিবারের সদস্যদের জন্য ভেজালমুক্ত তালশাঁস কিনছেন।

তালশাঁস বিক্রেতারা বলছেন, নওগাঁর উঁচু বরেন্দ্র অঞ্চল পোরশা, সাপাহার ও নিয়ামতপুর উপজেলায় তালগাছের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। এ ছাড়া জেলার অন্যান্য উপজেলা এবং রাজশাহী ও নাটোর থেকেও তালশাঁসের চালান আসে। মৌসুমের শুরুতে বৈশাখ মাসে প্রতিটি তালশাঁস ১০ থেকে ১২ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এখন বাজারে ব্যাপক পরিমাণে কচি তালের সরবরাহ থাকায় দাম কমে গেছে।

আজ সকালে নওগাঁ শহরের লিটন ব্রিজের ওপর দেখা যায়, ব্রিজের এক পাশে ভ্যানে করে তালশাঁস বিক্রি করছেন জিয়াউর রহমান নামের এক ভ্রাম্যমাণ বিক্রেতা। সেখান থেকে তালশাঁস কিনছেন স্থানীয় একটি ব্যাংকের কর্মকর্তা শামীম হোসেন।

তিনি বলেন, ‘সাধারণত আমি সব ধরনের মৌসুমি ফল নিজে খাই ও পরিবারের অন্য সদস্যদের খাওয়ানোর চেষ্টা করি। কারণ, একেক ফলে একেক ধরনের পুষ্টিগুণ থাকে। তালের শাঁস একটি সুস্বাদু ফল। প্রচণ্ড গরমে তালশাঁস খেতে ভালোই লাগে। তাই প্রতি গ্রীষ্মে বাজারে তালশাঁস উঠলে কিনে খাই।’

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর নওগাঁর অতিরিক্ত উপপরিচালক (উদ্যান) রেজাউল করিম বলেন, তালের শাঁসে বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন ও খনিজ উপাদান আছে। অন্য ফলের তুলনায় এতে ক্যালসিয়াম, লৌহ, আঁশ ও ক্যালরির উপস্থিতি অনেক বেশি।

নওগাঁ মেডিকেল কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ ও পুষ্টিবিদ আবদুল বারী বলেন, তালশাঁসের বেশির ভাগ অংশ জলীয়। ফলে দ্রুত শরীর শীতল করার পাশাপাশি আবহাওয়ার তারতম্যের কারণে শরীর দ্রুত পানি হারালে তা পূরণ করতে পারে। এছাড়া তালশাঁসে ক্যালসিয়াম, লৌহ ও ক্যালরি থাকায় শরীরের কোষের ক্ষয় প্রতিরোধ করে। ত্বকের সৌন্দর্য বাড়ায়। হাড় গঠনে সহায়তার পাশাপাশি সুস্থ দাঁতের নিশ্চয়তাও দেয়। তাই অন্যান্য ফলের পাশাপাশি সব বয়সী মানুষকেই পরিমিত পরিমাণে তালশাঁস খাওয়া উচিত।

Please Share This Post in Your Social Media



© 2023 priyorajshahi.com
Developed by- .:: SHUMANBD ::.