বুধবার | ২৫শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১০ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নওগাঁয় বোরোর ভরা মৌসুমেও কেজিতে চালের দাম বেড়েছে ২-৬ টাকা

নিজস্ব প্রতিবেদক, নওগাঁঃ উত্তরের জেলা নওগাঁ ধান উৎপাদনে বরাবরই এগিয়ে। চলতি বছর বোরো মৌসুমে প্রায় ১৩ লাখ টন ধান উৎপাদিত হয়েছে এ জেলায়। বর্তমানে চলছে বোরোর ভরা মৌসুম। স্বাভাবিকভাবে এ সময়ে চালের দাম কমে আসার কথা। তবে এর কোনো প্রভাব এখনো পড়েনি চালের বাজারে।

ভরা মৌসুমেও বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে জেলার পাইকারি পর্যায়ে প্রতি কেজি চালের দাম ২-৬ টাকা বাড়িয়েছে মিল মালিক ও আড়ৎদাররা। যদিও একই সময়ে খুচরা বাজারের চালের দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। চালের বাজারের সিন্ডিকেট ভাঙতে প্রশাসনের মজুতবিরোধী অভিযান প্রয়োজন বলে মনে করছেন খুচরা চাল ব্যবসায়ীরা।

নওগাঁ মহল্লার আড়ৎদারপট্টিতে খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, বর্তমানে পাইকারি পর্যায়ে মানভেদে প্রতি কেজি চালের দাম ২-৬ টাকা বৃদ্ধি পেয়ে স্বর্ণা-৫ জাতের চাল ৫১-৫২ টাকা, ব্রি আর-২৮ ৫৬-৫৭ টাকা, সুভলতা ৫৭-৫৮ টাকা, জিরাশাইল ৬২-৬৩ টাকা এবং কাটারিভোগ ৬১-৬৫ টাকা দরে বিক্রি করছেন মিল মালিক ও আড়ৎদাররা। দুই সপ্তাহ আগে এই মোকামে মানভেদে প্রতি কেজি স্বর্ণা-৫ জাতের চাল ৪৯-৫০ টাকা, ব্রি আর-২৮ ৫৪-৫৫ টাকা, সুভলতা ৫১-৫২ টাকা, জিরাশাইল ৫৯-৬০ টাকা এবং কাটারিভোগ ৫৯-৬২ টাকা করে বিক্রি হয়েছিল।

অপরদিকে পৌর চাল বাজারে খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, বর্তমানে খুচরা পর্যায়ে মানভেদে প্রতি কেজি স্বর্ণা-৫ জাতের চাল ৫০-৫২ টাকা, সুভলতা ৫৪-৫৫ টাকা, জিরাশাইল ৫৮-৬০ টাকা এবং কাটারিভোগ ৬০-৬২ টাকা দরে বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা। গত এক মাস যাবৎ খুচরা পর্যায়ের এই বাজার দর স্থিতিশীল রয়েছে।

মালশন রাইস সেন্টারের খুচরা চাল ব্যবসায়ী মানিক প্রামাণিক বলেন, গত ১ মাস যাবৎ বাজারে ক্রেতা নেই বললেই চলে। তাই পূর্বের চালগুলোই এখনো শেষ করতে পারিনি। বাজার খুচরা পর্যায়ে এখনো স্থিতিশীল রয়েছে। এই মুহূর্তে পাইকারিতে চালের দাম বেড়ে যাওয়া অযৌক্তিক। খুচরা বাজারে কোনো সিন্ডিকেট হয় না। আড়ত ও মিলগেটে সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য বেড়েই চলেছে। বোরো মৌসুমের শুরুতে কম দামে কেনা ধান থেকে চাল তৈরি করে ইচ্ছেমতো চালের দাম নির্ধারণ করে দিচ্ছে বড় ব্যবসায়ী ও মিলাররা। মজুতবিরোধী অভিযান পরিচালনা হলে পাইকারি পর্যায়ে চালের দাম নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে।

সততা রাইস এজেন্সির আড়তদার ও পাইকারি চাল ব্যবসায়ী সুকুমার ব্রহ্ম বলেন, এ অঞ্চলের নিম্নবিত্ত থেকে শুরু করে মধ্যবিত্তদের কেউই মোটা চালের ভাত খেয়ে অভ্যস্ত নয়। তাই সরকার সংগ্রহ অভিযানে বিভিন্ন সংস্থা থেকে শুরু করে যে-সব উপকারভোগীদের সুবিধার্থে মোটা চাল সংগ্রহ করছেন সেই লক্ষ্য পুরোপুরি ব্যর্থ হচ্ছে। গুদাম থেকে বেরিয়ে কয়েক হাত বদলের পর চালগুলো আবারও সরকারি গুদামে যাচ্ছে। এর প্রভাব পড়েছে চালের বাজারে। চিকন ও মাঝারি আকারের চালের চাহিদা বিগত মৌসুমের তুলনায় কয়েক গুণ বেড়ে যাওয়ায় ঈদের আগে ও পরে কয়েক দফায় প্রতি কেজি চালের দাম নওগাঁ মোকামে ২-৬ টাকা বেড়েছে। সরকার মোটা চাল সংগ্রহের পাশাপাশি চিকন চাল কেনা শুরু করলেই বাজারের এই অস্থিরতা কমবে। সেই সাথে সংগ্রহের উদ্দেশ্যও সফল হবে।

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে নওগাঁ জেলা চালকল মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ হোসেন চকদার ঢাকা পোস্টকে বলেন, বর্তমানে বোরোর ভরা মৌসুম চলছে। বাজারে ধানের সরবরাহ সংকট নেই। তাই এই মুহূর্তে চালের দাম বেড়ে যাওয়াটা অস্বাভাবিক। এরপরেও গত দুই সপ্তাহের ব্যবধানে পাইকারি পর্যায়ে মানভেদে প্রতি কেজি চালের দাম ২-৩ টাকা বেড়েছে। কারণ এখনো জেলার বেশিরভাগ চালকল বোরো মৌসুমের ধান থেকে চাল উৎপাদন প্রক্রিয়া শুরু করেনি। মোকামে চালের সরবরাহ সংকটের কারণে বর্তমানে বেশি দামে চাল কেনা-বেচা হচ্ছে। চালকলগুলো পুরোপুরি চালু হলে শীঘ্রই চালের বাজার আবারো নিয়ন্ত্রণে আসবে।

ঢাকা ও চট্টগ্রামের মোকামগুলোতে চালের দাম বেড়ে যাওয়ার প্রসঙ্গে ফরহাদ হোসেন চকদার বলেন, প্রতি বছর আমের মৌসুমে চাল পরিবহনে ব্যবহৃত ট্রাকের সংকট দেখা দেয়। এবারেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। নওগাঁ থেকে ঢাকায় চাল পাঠাতে আগে যা খরচ হতো তার চেয়ে কিছুটা খরচ বেড়েছে। তবে বেড়ে যাওয়া খরচের পরিমাণ খুবই সামান্য। পরিবহন ভাড়া বৃদ্ধির অযুহাত দেখিয়ে চালের দামে অতিরিক্ত হেরফের করা অযৌক্তিক। কিছুদিন পর আম পরিবহনের চাপ কমলে ট্রাকের ভাড়া কমে আসবে।

Please Share This Post in Your Social Media



© 2023 priyorajshahi.com
Developed by- .:: SHUMANBD ::.