নিজস্ব প্রতিবেদক: সমন্বিত শিশু পুনর্বাসন কেন্দ্র। রাজশাহী মহানগরীর উপশহর এলাকায় অবস্থিত। এর দুটি শাখা আছে। একটি বালক ও অন্যটি বালিকা শাখা। তবে এই দুই শাখায় অভিযোগের অন্ত নেই। খাবার থেকে পোষাকেও অনিয়মের অভিযোগ আছে। আছে বিভিন্ন নির্যাতন ও নানা অব্যবস্থাপনার অভিযোগ। এর মধ্যে এই বালক শাখাটি রাজশাহী থেকে সরিয়ে নাটোরের নেওয়ার চিন্তাও করছে সমাজসেবা অধিদপ্তর। কিন্তু সব অভিযোগই নাকচ করেছেন প্রতিষ্ঠানটির উপ-প্রকল্প পরিচালক।
রাজশাহীর এই দুটি শাখায় আদালত থেকে পাঠানো হয় শিশু-কিশোরদের। এসব শিশু-কিশোর বিভিন্ন অপরাধে অভিযুক্ত। অথবা এদের মায়ের অভিযুক্ত। ১৮ বছর বয়স নাহলে এখানেই আশ্রয় মেলে তাদের। এই দুই শাখায় প্রায় ২০০ জনের মতো বালক-বালিকা।
পুনর্বাসন কেন্দ্র থেকে ২০২০ সালের জুন মাসে দুই শিশু নিখোঁজ হয়। পরে একজন চলে এলেও আরেকজন ফিরে আসেনি। সরকারি এ প্রতিষ্ঠানটিতে এ ধরনের ঘটনা এর আগেও কয়েকবার হয়েছে। কেন্দ্রে শিশুদের নির্যাতন, খাবারে অনিয়মসহ নানা অব্যবস্থাপনার কারণে অনেক শিশুর চলে যাওয়া বা নানা কারণে নিখোঁজের পর শুধুমাত্র থানায় দায়সারা সাধারণ ডায়েরি করেই বসে থেকেছেন শিশু কেন্দ্রটির দায়িত্বরত কর্মকর্তারা। পরবর্তীতে শিশু উদ্ধারে কোনো ব্যবস্থা তারা নেননি।
কেন্দ্রে থাকা বালক-বালিকাদের অভিযোগ, পুনর্বাসন কেন্দ্রের দায়িত্বরতরা দীর্ঘদিন ধরে তাদের উপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালাচ্ছেন। অনেক সময় তাদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করেন ও অশ্লীল কথাবার্তা বলেন। অধিকাংশ সময় জামা কাপড়, খাবার, গোসলসহ প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র পাওয়া যায় না। পরিবারের সঙ্গে কথা বলতে চাইলেও কথা বলতে দেওয়া হয় না। শারীরিক নির্যাতনের পাশাপাশি মা-বাবা তুলে গালিগালাজ করা হয়।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, নগরীর উপশহর এলাকায় সেক্টর তিন নম্বরের একটি তিনতলা ভবনে বালকদের কেন্দ্র। বালিকাটি তার ২০০ গজ দূরে দোতালা ভবনের। তবে এগুলো সব ভাড়া নেওয়া। বেশিরভাগ শিশু-কিশোরীর চোখে মুখে ভয়ের ছাপ। তবে তাদের প্রতিবেদকের সাথে কথা বলতে দেওয়া হয়নি। সেখানকার স্টাফরা জানান, অনুমতি ব্যতিত কাউকে কথা বলতে দেওয়ার সুযোগ নেই।
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ- প্রায় সময় এই প্রতিষ্ঠান থেকে মেয়েদের চিৎকারের শব্দ আসে। মেয়েরা কান্নাকাটি করেন সেটিও দেখা যায়। বিষয়টি নিয়ে পুনর্বাসন কেন্দ্রের দায়িত্বরতরা লুকোচুরি করেন। এটি একটি গোপন আস্তানার মতো। কাউকে প্রবেশ করতে দেওয়া হয় না সেখানে।
এছাড়াও অভিযোগ আছে, কেন্দ্রে থাকা বালক-বালিকাদের নিম্নমানের খাবার পরিবেশন, নিম্নমানের পোষাক, এছাড়াও কিশোরীদের যৌন হয়রানি করার মতো গুরুত্বর অভিযোগও আছে। তবে এসব অভিযোগ নাকচ করেছেন উপ-প্রকল্প পরিচালক কামাল হোসেন চৌধুরী। তিনি বলেন, যে অভিযোগগুলো করা হচ্ছে সেগুলো সত্য নয়। পোষাকে কোনো অনিয়ম হয় না। এগুলো টেন্ডারের মাধ্যমে তৈরি করা হয়। এছাড়া খাবারের দাম আগেরটা নির্ধারণ করা আছে। আমাদের দুটি শাখা আছে এখানে যৌন হয়রানি হয় না। তবে কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া বেশি কথা বলা যাবে না বলে জানান তিনি।