সোমবার | ২৩শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৮ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

তিন কলেজের শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষে ৩ জন মারা যাওয়ার দাবি

প্রিয় রাজশাহী ডেস্কঃ রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে অবস্থিত ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজে (ডিএমআরসি) ব্যাপক ভাঙচুর চালিয়েছেন কবি নজরুল ও সোহরাওয়ার্দী কলেজের শিক্ষার্থীরা। এ সময় কলেজটির বিভিন্ন সামগ্রী ও সরঞ্জাম নিয়ে যান হামলাকারীরা। হামলায় কলেজটির তিন শিক্ষার্থী মারা যাওয়ার খবর দিয়েছে কলেজ কর্তৃপক্ষ। তবে মারা যাওয়ার তথ্য পুলিশের পক্ষ থেকে এখনও নিশ্চিত করা যায়নি।

সোমবার (২৫ নভেম্বর) বেলা ১২টায় শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ ও কবি নজরুল কলেজের হাজারো শিক্ষার্থী একত্রিত হয়ে ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজে হামলা চালায়। এতে উভয় পক্ষের প্রচুর শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন।

পরে বেলা ১টার দিকে মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের শিক্ষার্থী ও স্থানীয় জনতা এবং শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ ও কবি নজরুল কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষে রণক্ষেত্রে পরিণত হয় পুরো যাত্রাবাড়ী-ডেমরা এলাকা।

এর আগে ‘মেগা মানডে’ ঘোষণা দিয়ে কবি নজরুল কলেজের সামনে থেকে মিছিল নিয়ে ডিএমআরসির উদ্দেশ্যে রওনা হন এই দুই কলেজের হাজারো শিক্ষার্থী। অপরদিকে মোল্লা কলেজের ছাত্ররাও অবস্থান নেন সড়কে।

তিনজন মারা যাওয়ার দাবি মোল্লা কলেজের

ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আশরাফ সামীর এক বিবৃতিতে জানান, আজ সোমবার আমাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এক নৃশংস হামলা চালানো হয়েছে। তথাকথিত সাত কলেজ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে বহিরাগত একদল সন্ত্রাসী প্রবেশ করে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালায়। এ হামলায় তিনজন শিক্ষার্থী নির্মমভাবে প্রাণ হারান এবং শতাধিক শিক্ষার্থী ও শিক্ষক আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে অনেকের অবস্থা গুরুতর, যাদের মধ্যে কয়েকজনকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ এবং ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজের কিছু ছাত্র নামধারী ব্যক্তি নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের মদদে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অস্থিতিশীল করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিল। হামলাকারীদের অধিকাংশই শিক্ষার্থী নয়, বরং সন্ত্রাসী কার্যক্রমে লিপ্ত বলে অভিযোগ করা হয়।

হামলাকারীরা আমাদের গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র, সম্পদ ও শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত মালামাল লুট করেছে। এ ছাড়া কলেজ ভবনের ব্যাপক ক্ষতিসাধন করে তারা অধ্যক্ষের কার্যালয়সহ বিভিন্ন কক্ষ ভাঙচুর করে।

কলেজ কর্তৃপক্ষ বারবার প্রশাসনের স্থানীয় ও সর্বোচ্চ পর্যায়ে সহযোগিতার আবেদন করলেও এ পর্যন্ত কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। এ অবস্থায় আমাদের শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা ও শিক্ষার পরিবেশ বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।

জানতে চাইলে মাহাবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের অধ্যক্ষ ড. মাহাবুবুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, মারা যাওয়ার খরবটি আমি নিশ্চিত নই। তবে প্রচুর ছেলে কলেজে এসে হামলা ও ব্যাপক ভাঙচুর চালায়। এ সময় বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্রের সঙ্গে পিস্তল দিয়ে গুলিও চালানো হয়। এতে অনেকেই হতাহত হয়।

উল্লেখ্য, গতকাল রোববার ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে রাজধানীর ৩৫টি কলেজের ছাত্ররা ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ, কবি নজরুল সরকারি কলেজ ও সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজে ব্যাপক ভাঙচুর চালান। এ সময় সোহরাওয়ার্দী কলেজে সাত কলেজের পরীক্ষা চলছিল। পরীক্ষার হলেও হামলা চালান ছাত্ররা। তাদের তাণ্ডবে পরীক্ষা পণ্ড হয়ে যায়। পরে বাধ্য হয়ে এই পরীক্ষা স্থগিত করে কর্তৃপক্ষ। অপরদিকে রাতে সেন্ট গ্রেগরি কলেজে হামলা চালান সোহরাওয়ার্দী কলেজ ছাত্ররা।

এদিকে রাতে এক সংবাদ সম্মেলনে সোহরাওয়ার্দী কলেজের শিক্ষার্থীরা, ভাঙচুর ও প্রশাসনিক কাগজপত্র ফিরিয়ে দিতে ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম দেন। এ সময় তারা কলেজের প্রায় ১০ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করেন।

গত ১৮ নভেম্বর ঢাকা ন্যাশনাল মেডিক্যালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মাহাবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের (ডিএমআরসি) শিক্ষার্থী অভিজিৎ মারা যায়। ডেঙ্গু আক্রান্ত অভিজিতের প্লাটিলেট কমে গেলে আগের দিন তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে নিতে চেয়েছিলেন তার পরিবার। কিন্তু ন্যাশনাল মেডিক্যাল কর্তৃপক্ষ তাকে নিতে দেয়নি বলে অভিজিতের সহপাঠীদের অভিযোগ।

তারা বলছেন, অভিজিতের মৃত্যুর পর টাকার জন্য লাশ আটকে রাখে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। ২০ নভেম্বর ডিএমআরসি কলেজের শিক্ষার্থীরা লাশ নিতে এলেও কোনো সমাধান না হওয়ায় শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ শুরু করেন।

পরে সন্ধ্যার পর লাঠিপেটা করে পুলিশ শিক্ষার্থীদের সরিয়ে দেয়। পরদিন ২১ নভেম্বর ডিএমআরসির ছাত্ররা আবার ন্যাশনাল মেডিক্যালে গেলে কবি নজরুল ও সোহরাওয়ার্দী কলেজ ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা তাদের ওপর হামলা করে। তাতে অনেক শিক্ষার্থী আহত হন বলে তাদের অভিযোগ।

Please Share This Post in Your Social Media



© 2023 priyorajshahi.com
Developed by- .:: SHUMANBD ::.