নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজশাহীতে বাস ও সিএনজি চালকদের দ্বন্দ্বের জেরে বন্ধ থাকা বাস চলাচল স্বাভাবিক হয়েছে। এর জেরে ৭০টি সিএনজি ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। উভয়পক্ষের ১৮ থেকে ২০ জন আহত হয়েছে। সোমবার (১৬ ডিসেম্বর) সকাল ১১টা থেকে মঙ্গলবার (১৭ ডিসেম্বর) দুপুর ১টা পর্যন্ত তানোর ও রাজশাহীর গোহাঙ্গা সিএনজি স্ট্যান্ডে এ ঘটনা ঘটে।
জানা যায়, সোমবার সকালে জেলার তানোর উপজেলা সদরে সিএনজি অটোরিকশার চালকেরা বাসের ছয়জন চালক, হেলপার ও কন্ডাক্টরকে পিটিয়ে আহত করেন। এর জেরে সোমবার দুপুরে রাজশাহী থেকে সব রুটের বাস চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। তখনই বাস শ্রমিকেরা শিরোইল বাস টার্মিনাল এলাকায় বিক্ষোভ করেন। বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে তারা রেলগেটে সিএনজি স্ট্যান্ডের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করেন। তবে পুলিশ ও সেনাবাহিনী তাদের শান্ত করেন। মঙ্গলবার দুপুর ১ টা পর্যন্ত রাজশাহী থেকে কোনো বাস ছাড়েনি।
এই ঘটনার জেরে পরেরদিন মঙ্গলবার সকালে বাস শ্রমিকেরা হাতুড়ি ও লাঠিসোঁটা নিয়ে রেলগেটে চলে আসেন। এসময় তারা সিএনজি অটোরিকশা ভাঙচুর করেন। বাধা দিতে গেলে সিএনজি চালক-যাত্রীদেরও পিটিয়ে আহত হন। পরে বাস শ্রমিকেরা ঘটনাস্থল থেকে চলে গেলে সেখানে পুলিশ আসেন।
রাজশাহী সিএনজি মালিক সমিতির সহ-সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম বলেন, আমাদের প্রায় ৯০টি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে। এ সময় পিটিয়ে আহত করা হয় কমপক্ষে ৪০ জনকে। এদের বেশিরভাগই চালক, কয়েকজন যাত্রী। এদের মধ্যে একজন গর্ভবতী নারীও আছে।
এই ঘটনার পরে স্ট্যান্ডে অবস্থান নেয় সিএনজি চালকরা। আর শিরোইল বাস টার্মিনালে অবস্থান নেয় বাস শ্রমিকরা। এরমধ্যে বাস শ্রমিক নেতাদের প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা হয় সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে। প্রশাসনের আশ্বাসে মঙ্গলবার (১৭ ডিসেম্বর) দুপুর দুইটায় রাজশাহী থেকে বাস চলাচল শুরু হয়। এরপর একে একে রাজশাহীর কাউন্টারগুলো থেকে বিভিন্ন গন্তব্যে বাসগুলো ছেড়ে যায়।
রাজশাহী মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি হেলাল উদ্দিন বলেন, আমরা শ্রমিকদের জানিয়ে দিয়েছি, বাস চালাতে। বাস চলাচল শুরু হয়েছে। এখন আস্তে আস্তে সব কাউন্টার থেকে বাস চলাচল শুরু হবে।
বাস চালক রবিউল ইসলাম জানান, বাস চলাচল শুরু হয়েছে। মোটামুটি যাত্রী আছে। কারণ হঠাৎ করে বাস চলাচলের সিদ্ধান্তের কারণে যাত্রী একটু কম। তবে মানুষ যখন শুনবে বাস চলাচল শুরু হয়েছে, তখন আরো যাত্রী পারবে।
এ বিষয়ে রাজশাহী মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম পাখি বলেন, দুপুর দেড়টার দিকে বাস চলাচল শুরু হয়েছে। এখন বাস চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে বাস শ্রমিকদের নিরাপত্তা দেয়ার কথা জানানো হয়েছে। আমরা বাস শ্রমিকদের জানিয়েছি তারা সড়কে গাড়ি চালাবে।
নগরের বোয়ালিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মেহেদী মাসুদ সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, আমরা এসে ভাঙচুর করা ৩২টি গাড়ি পেয়েছি। অন্য গাড়িগুলো চলে গেছে। ভাঙচুর করা গাড়ির সংখ্যা ৭০টি হতে পারে। সব গাড়ির কাঁচ ভেঙে দেওয়া হয়েছে। এরপর কিছু গাড়ি উল্টে ফেলা হয়। যাত্রী ও চালক মিলিয়ে ১২ জনের মতো আহত হতে পারেন। আমরা সিএনজি চালকদের মামলা করতে বলেছি। তারা মামলা দিলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
রাজশাহীতে সিএনজি চালক ও বাস শ্রমিকদের এই দ্বন্দ্ব অনেক পুরনো। বাস শ্রমিকেরা দীর্ঘদিন ধরেই সিএনজি স্ট্যান্ড শহরের বাইরে নিয়ে যাওয়ার দাবি করছেন। প্রায়ই তাদের মধ্যে ছোটখাট সংঘাত হয়। এর আগেও বাস চালক ও হেলপাররা তানোর উপজেলা সদরে মারধরের শিকার হয়েছেন। তখনও বাস চালকেরা গাড়ি বন্ধ রেখে এর প্রতিবাদ করেছিলেন।
তানোর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিজানুর রহমান বলেন, সোমবার ছয়জন বাস শ্রমিককে মারধরের ঘটনায় রাতে থানায় একটি মামলা হয়েছে। এতে আসামি হিসেবে ১৮ জন সিএনজি চালকের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া অজ্ঞাত আরও আসামি রয়েছেন। মামলার পর এজাহারভুক্ত দুই আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।