নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার চর আষাড়িয়াদহ ইউনিয়নে বিআরএস রেকর্ডের জন্য জমি জরিপ করতে গিয়ে দিয়ারা সেটেলমেন্ট অপারেশনের ১০ কর্মী অবরুদ্ধ করেছেন গ্রামবাসী। সার্ভেয়ারদের মুচলেকা দিতে হয়েছে যে, এই চরে তারা আর জরিপ করতে আসবেন না। এরপরই তাদের মুক্তি মেলে।
মঙ্গলবার (২৪ ডিসেম্বর) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) মোড়ে এলাকার লোকজন তাদের অবরুদ্ধ করে রাখেন। পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) নির্দেশে পুলিশ ও বিজিবি সদস্যরা গিয়ে তাদের উদ্ধার করেন।
পদ্মা নদীর ওপারে ভারতীয় সীমান্ত লাগোয়া এই ইউনিয়নের দুটি মৌজায় এর আগে ২০০৯ সালে বিআরএস রেকর্ডের জরিপ কার্যক্রম পরিচালিত হয়। তখন অনেকের জমি প্রভাবশালীদের নামে রেকর্ড হয়ে যায়। ইউনিয়নবাসীর অভিযোগ, স্থানীয় একটি প্রভাবশালী ভূমিদস্যু চক্র অসাধু সার্ভেয়ারদের ঘুষ দিয়ে অন্যের অনেক জমি নিজেদের নামে করে নিয়েছেন। খতিয়ানে তারা খাস জমিরও মালিক হয়ে গেছেন। কিছুদিন ধরে ওই একই চক্র ইউনিয়নের বাকি এলাকায় বিআরএস রেকর্ড করার জন্য তৎপর হয়ে উঠেছিলেন।
সম্প্রতি দিয়াড় মানিকচক ও আষাড়িয়াদহ মৌজায় দিয়ারা সেটেলমেন্টের জন্য নোটিশ জারি করা হয়। ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফার ছেলে গোলাম মোর্শেদ তোতা এলাকার মসজিদে মসজিদে গিয়ে বিআরএস রেকর্ডের চিঠি দিয়ে আসেন মুসল্লিদের পড়ে শোনানোর জন্য। দিয়ারা সেটেলমেন্ট অপারেশন, রাজশাহীর চার্জ অফিসারের ওই জরুরি বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ১০ ডিসেম্বর থেকে বিআরএস রেকর্ডের জন্য দিয়ারা জরিপ শুরু হবে।
এতে উদ্বিগ্ন হয়ে ওঠেন চরবাসী। এই জরিপ না করার জন্য বিভিন্ন দপ্তরে আবেদন করেন। তাতে সাড়া না পাওয়া গেলে ১০ ডিসেম্বর সকাল থেকে তারা ইউপি মোড়ে অবস্থান নেন। ফলে সেদিন কেউ জরিপ করতে যাননি। হঠাৎ মঙ্গলবার জরিপের জন্য দিয়ারা অপারেশনের সার্ভেয়ার-কর্মচারী মিলিয়ে ১০ জন যান চরে। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন চরবাসী।
তাদের ইউপি মোড়ে ঘিরে ধরেন কয়েকশো মানুষ। খবর পেয়ে ছুটে যান ইউপি চেয়ারম্যান আশরাফুল ইসলাম ভোলা। তিনি সার্ভেয়ারদের নিরাপত্তার কথা ভেবে তাদের ইউপি কার্যালয়ে নিয়ে রাখেন। বাইরে তখন বিক্ষুব্ধ মানুষ জরিপের বিরুদ্ধে স্লোগান দেওয়া হয়। ইউপি কার্যালয়ের বারান্দার গ্রিল ও দরজায় ধাক্কা দিতে থাকেন তারা।
এ সময় তখন স্থানীয়রা ইউপি চেয়ারম্যান আশরাফুল ইসলাম ভোলার ওপরেও চড়াও হন। তারা বলেন, ‘ঘুষ-দুর্নীতির ফাঁদ’ এই জরিপ বন্ধ করতে না পারলে চেয়ারম্যানকেই পদত্যাগ করতে হবে। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে ইউপি চেয়ারম্যান ইউএনওকে ফোন করেন। তখন ইউএনও পুলিশ ও বিজিবি সদস্যদের পাঠিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেন এবং সার্ভেয়ারদের উদ্ধারের ব্যবস্থা করেন।
ইউপি চেয়ারম্যান আশরাফুল ইসলাম ভোলা বলেন, কয়েকদিন আগে ইউএনও আবুল হায়াত আমাকে ফোন করে বলেন যে, দিয়ারা সেটেলমেন্ট অপারেশনের সার্ভেয়াররা জমি জরিপ করতে যাবেন। আমি তখন বলি, চরের মানুষ এটা চায় না। ইউএনও আমাকে বলেন, ওরা যেতে চায় যাক। তারপর দেখা যাবে। সার্ভেয়াররা এলে তারা তাকে অবরুদ্ধ করে রাখেন। বাধ্য হয়ে আমি ইউএনওকে ফোন করলে তিনি পুলিশ-বিজিবিকে পাঠিয়ে সার্ভেয়ারদের উদ্ধারের ব্যবস্থা করেন। তারা একটা মুচলেকা দিয়েছেন যে চরে আর কখনও জরিপ করতে আসবেন না। এই মুচলেকা জনগণের কাছেই আছে।
ইউএনও আবুল হায়াত বলেন, চরের মানুষ যে জরিপের ব্যাপারে এত ক্ষুব্ধ তা আমি জানতাম না। আমাকে দিয়ারা সেটেলমেন্ট থেকে জানায় যে তারা জরিপ করতে যাবেন। আমি সেটা চেয়ারম্যানকে জানিয়েছিলাম। কিন্তু তারা গেলে জনগণ অবরুদ্ধ করে রাখেন। আমি বলে দিয়েছি, জনগণ যেহেতু চায় না, এই জরিপ হবে না। ঢাকায় এটা জানিয়ে দিয়েছি।
এ বিষয়ে কথা বলার জন্য মঙ্গলবার বিকালে দিয়ারা সেটেলমেন্ট অপারেশন, রাজশাহীর চার্জ অফিসার সলিল কিশোর চাকমাকে ফোন করা হলে তিনি ধরেননি। স্থানীয়দের বিরোধিতার বিষয়ে এর আগে তিনি বলেছিলেন, ‘স্থানীয় ভূমি মালিকদের আপত্তি থাকলে আমরা জরিপ করতে পারব না। সেটা আমরা ঊর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানাব।’ গতবারের জরিপে একজনের জমি অন্যজনের নামে রেডর্ক করে দেওয়ার অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেছিলেন, ‘এবার সেটা হবে না। এখন ডিজিটাল পদ্ধতিতে জরিপ হচ্ছে।’