নওগাঁ প্রতিনিধি: নওগাঁয় চলতি মৌসুমে ফুলকপি নিয়ে বড় বিপাকে পড়েছেন চাষিরা। মৌসুমের শুরুতে প্রতিটি ফুলকপি ৫০-৬০ টাকায় বিক্রি হলেও বর্তমানে কৃষক পর্যায়ে তা নেমে এসেছে মাত্র ২-৪ টাকায়।
চাষিদের দাবি, তাদের উৎপাদিত ফসলের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে সরকারের কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন। তা না হলে কৃষি খাত নিয়ে চাষিদের মধ্যে আগ্রহ কমে যাবে।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, অতিরিক্ত উৎপাদনের কারণে বাজারে ফুলকপির সরবরাহ বেড়ে গেছে। এতে করে চাষিরা তাদের উৎপাদন খরচও তুলতে পারছেন না। অনেক চাষি বাধ্য হয়ে লোকসানের মধ্যেই ফুলকপি বিক্রি করছেন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, এ বছর নওগাঁয় ৬০০ হেক্টর জমিতে ফুলকপির আবাদ হয়েছে। এই জমি থেকে প্রায় ৬ হাজার ২০০ টন ফুলকপি উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে। রোগবালাই কম থাকায় ফলন ভালো হলেও অতিরিক্ত সরবরাহের কারণে দাম কমে গেছে।
নওগাঁ সদর উপজেলার নওগাঁ-রাজশাহী আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশে ডাক্তারের মোড় এলাকায় প্রতিদিন ভোর থেকে সকাল ৮টা পর্যন্ত বসে অস্থায়ী পাইকারি সবজির বাজার। এই বাজারে প্রতিদিন লক্ষাধিক টাকার ফুলকপি কেনাবেচা হয়।
সরেজমিনে দেখা যায়, দিনের প্রথম প্রহরেই বিভিন্ন এলাকা থেকে ফুলকপি নিয়ে আসা চাষিদের ভিড়। বাজারে সাদা, টাটকা ফুলকপির স্তূপ জমেছে। চাষিরা ভ্যানে করে ক্রেতাদের সামনে সাজিয়ে রেখেছেন। কিন্তু দাম নিয়ে তাদের মধ্যে তীব্র হতাশা স্পষ্ট। দাম এতটাই কমে গেছে যে, কৃষকেরা বাধ্য হয়ে উৎপাদন খরচের চেয়েও কম দামে ফুলকপি বিক্রি করছেন। আর অতিরিক্ত সরবরাহের কারণে পাইকারি ব্যবসায়ীরাও দাম কমিয়ে দিয়েছেন।
চাষি হামিদ উদ্দিন বলেন, আজ ১০০টা কপি এনেছি। কিন্তু পাইকারি ব্যবসায়ীরা দাম বলছেন মাত্র ২ টাকা। অনেক দামাদামির পর বাধ্য হয়ে আড়াই টাকায় বিক্রি করেছি। ভালো দামের আশায় ভোরে হাটে এসেছিলাম। কিন্তু ভ্যানভাড়াও উঠল না।
আলমগীর হোসেন নামের আরেক চাষি বলেন, এখন দাম এতটাই কম যে, উৎপাদন খরচই উঠছে না। মৌসুমের শুরুতে ভালো দাম পেলেও এখন দুশ্চিন্তায় দিন কাটছে। এত কষ্ট করে চাষ করেও লোকসান গুনতে হচ্ছে।
বাজারের পাইকারি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, সরবরাহ এত বেশি যে, তারা সব কপি কিনতে পারছেন না। ব্যবসায়ী কুদ্দুস আলী বলেন, আমরা সারা দেশে কপি সরবরাহ করি। তবে বাজারে অতিরিক্ত সরবরাহ থাকায় দাম কম। চাষিদের জন্য বিষয়টি কষ্টের।
এমন অবস্থা শুধু নওগাঁ সদরের নয়, জেলার ১১টি উপজেলায় দরদামের একই চিত্র। কুমুরিয়া গ্রামের চাষি আওরঙ্গদেব বলেন, ‘আমি এক বিঘা জমিতে ২ হাজার ৭০০ পিস ফুলকপির আবাদ করেছি। প্রতিটি কপিতে ৪-৫ টাকা খরচ হইছে। অথচ বাজারে বেচতে গিয়া দাম ২-৪ টাকা। আমাদের তো পুরাই লস হচ্ছে।’
চকজাফরাবাদ গ্রামের চাষি শমসের আলী বলেন, ‘মৌসুমের শুরুতে ৫০-৬০ টাকায় প্রতি পিস ফুলকপি বিক্রি করছিলাম। তখন লাভ হইছিল। কিন্তু এখন দামের অবস্থা দেখে কান্না আসে। অথচ একটা একটা করে ফুল উৎপাদনের অনেক কষ্ট করতে হয়।’
কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, একসঙ্গে একই ধরনের চাষাবাদের পরিবর্তে কৃষকদের পরিকল্পিতভাবে চাষাবাদ করা উচিত। পাশাপাশি ফসল উৎপাদনে বৈচিত্র্য নিয়ে আসতে হবে।
এ বিষয়ে নওগাঁ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘শুরুতে ভালো দামে ফুলকপি বিক্রি হওয়ায় কৃষকেরা লাভবান হয়েছিলেন। তবে একসঙ্গে বেশি ফুলকপি আবাদ করায় সরবরাহ বেড়ে গেছে এবং দাম কমেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছি, তারা যেন বিভিন্ন ধরনের ফসল চাষ করেন। এতে বাজারে ভারসাম্য আসবে এবং কৃষকেরা ভালো দাম পাবেন।’